হাটহাজারীতেই শায়িত হলেন জুনায়েদ বাবুনগরী : জানাযায় লাখো মানুষের ঢল
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
লাখ লাখ ভক্ত-অনুসারীদের কাঁদিয়ে চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় নিজ কর্মস্থলে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আলেমকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কবরের পাশেই হাটহাজারী মাদরাসার বাইতুল আতিক জামে মসজিদ সংলগ্ন ‘মাকবারাতুল জামিয়া’ নামক কবরস্থানে অবশেষে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। তবে হেফাজত আমিরের জীবদ্দশায় করা ওছিয়ত অনুযায়ী পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী তার মরদেহ নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে আল্লামা বাবুনগরীর মরদেহ রেখে জানাযার নামাজ সম্পন্ন হয়। তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল হাটহাজারী মাদরাসা ভেতরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ভীড়ের কারণে মরদেহ বহনকারী কফিন স্থানীয় ডাকবাংলো রোডে রাখা হয়। সেখান থেকেই নামাজে জানাযা পরিচালিত হয়। হাটহাজারী খাগড়াছড়ি মহাসড়কেই অধিকাংশ মানুষ কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান।
জানাযার ইমামতি করেন জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা ফটিকছড়ির উপজেলার নানুপুর মাদরাসার পরিচালক ও হেফাজতের সদ্য ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
জানাজায় হাটহাজারী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম, চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং তাদের অংঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আলেম, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ জনতা অংশ নেন।
এ সময় আল্লামা বাবুনগরীর সহকর্মী, ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীসহ জানাযায় আসা অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানাযা উপলক্ষে এলাকাজুড়ে বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েক শতাধিক র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোষাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন ছিল।
এর আগে বিকাল ৩টায় শেষবারের মতো নিজ বাড়িতে উদ্দেশ্যে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে রওনা হন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মরদেহ। বিকাল সাড়ে ৪টায় ফটিকছড়ি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বাবুনগর গ্রামে তার মরদেহ পৌঁছলে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
সন্ধ্যার পর বাবুনগরীর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি থেকে হাটহাজারী মাদরাসার দিকে রওনা দেয়। এ সময় বাবুনগরীর জীবদ্দশায় তাকে নানার কবরের পাশে দাফন করার জন্য বলেছিলেন এমন দাবিতে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি স্থানীয়রা আটকে দেয়। পরে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি রওনা দিয়ে রাত ৯টার দিকে হাটহাজারী মাদরাসায় এসে পৌঁছে।
এদিকে, রাত সাড়ে ৮টা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী বাসস্টেশন ও মিরের হাট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে ওই মহাসড়কে ৩-৪ এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় যাত্রীসাধারণ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জুনায়েদ বাবুনগরী ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
এর আগেও তিনি কয়েক দফা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত ৮ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় গাড়িতে বসে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।