যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিনে সিলেটের উদ্যোক্তা শাহেদ-শাহেরা দম্পতি
সময় সিলেট ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ইন্ক-৫০০০ (Inc.5000) এর তালিকায় স্থান পেয়েছেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতী দম্পতি শাহেদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী শাহেরা চৌধুরী। তাদের প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এসজে ইনোভেশন’র সাফল্যগাথা ম্যাগাজিন ইন্ক-৫০০০-এ ১৮ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী শাহেদ ইসলাম ও স্ত্রী শাহেরা চৌধুরী ২০০৪ সালে গড়ে তোলেন আইটি প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন (SJ Innovation)। সেবার মান, সেবা গ্রহিতাদের আস্থা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখিয়ে শাহেদ ও শাহেরার প্রতিষ্ঠানটি মর্যাদাপূর্ণ ইন্ক ম্যাগাজিনের এ বছরের তালিকায় ৪৪৪২ নম্বরে স্থান করে নিয়েছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছর (২০২১ সালে) তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক সেরা ৫ হাজার উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে ইন্ক-৫০০০ ম্যাগাজিন। আমেরিকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে তারা এই তালিকা তৈরি করে যা ইন্ক-৫০০০ নামে বিশ্বে পরিচিত। ফলে তথ্য প্রযুক্তিখাতের যে কোনো উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই তালিকায় স্থান পাওয়ার বিশেষ মর্যাদার।
ইতোপূর্বে এই ম্যাগাজিনের তালিকা মাইক্রোসফটসহ বিশ্বের খ্যতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছিল। তবে, ২০২১ সালে এই ধারায় যুক্ত হলো বাংলাদেশি দম্পতির তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক শাহেদ ইসলাম এবং যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশদ্ভুত শাহেরা চৌধুরীর হাত ধরে ২০০৪ সাল শুরু হয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশনের যাত্রা।
সিলেট পাইলট স্কুল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন শাহেদ ইসলাম। গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাতিউরা এলাকায়। তার স্ত্রী শাহেরা চৌধুরী যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টারে বড় হন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি সিলেট শহরে। এই দম্পতি সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং-এর উপর উচ্চতর পড়াশুনা করেন। পরে যুক্তরাস্ট্রে গড়ে তুলেন তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এসজে ইনোভেশন। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা কোম্পানীকে ওয়েব সেবা দান করে নজর কাড়ে তথ্য প্রযুক্তির জগতে। তিন হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটের উপর কাজের অভিজ্ঞতা থাকা এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের দেড় শতাধিক কর্মী নিয়ে রাজধানী ঢাকা ও সিলেটে দুটি শাখা পরিচালনা করছে।
ইন্ক-৫০০০ এর তালিকায় স্থান পাওয়া এসজে ইনভেশনের জন্য বড় অর্জন উল্লেখ্য করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেদ ইসলাম বলেন- ‘সেবাগ্রহিতাদের সফলতা এনে দেওয়া এবং কোম্পানির সাফল্যের লক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। এ অর্জনের মধ্যদিয়ে আমরা মনে করি আমাদের বিজনেস মডেল অত্যন্ত কার্যকর ছিল। মর্যাদার এ তালিকায় স্থান পেয়ে আমরা গর্বিত।’
তিনি আরও বলেন- ‘সততা, সেবার মান এবং সেবাদানে অভিজ্ঞ কর্মীদের উপর নির্ভর করে অতিমারির এই সময়েও এসজে ইনোভেশন বাংলাদেশে নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে বিশ্বের অনেক বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের জনশক্তি কমাচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় দক্ষ ও প্রযুক্তি নির্ভর জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে গত ৩ বছরে পাচঁ শতাধিক শিক্ষার্থীকে তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দিয়েছে এসজে।’
প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার শাহেরা চৌধুরী বলেন- ‘প্রতিষ্ঠানটির শুধু আকার বাড়েনি, সেবা প্রদানের মান বেড়েছে বহুগুণ। একদিকে মেধায়-প্রজ্ঞায় আমরা নিজেদের আরও বিকশিত করে তুলছি, অন্যদিকে পেশাগতভাবেও আমরা পৌঁছাতে পেরেছি এক ভিন্ন উচ্চতায়। এই অর্জন আমাদের আরও দায়বদ্ধ করে তুললো সেবা গ্রহিতাদের কাছে।’
এসজে ইনোভেশন একটি নিউইয়র্ক ভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি, যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে সফটওয়্যার সমস্যার জন্য কাস্টমাইজড সমাধান খুজেঁ পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপিকেশন এবং কোয়্যালিটি অ্যাসুরেন্সে বিশেষজ্ঞ, এবং সবই তাদের দক্ষ-অভিজ্ঞ কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে এবং ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড সফটওয়্যার (বেসিস) এর সদস্য এই প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, ইন্ক ম্যাগজিন পৃথিবীর অন্যতম বিশ্বস্ত একটি বিজনেস জার্নাল। যা নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং ব্যবসায় সফলতা, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদ-ফিচার-নিবন্ধসহ কৌশলগত ব্যবসায়িক দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। প্রভাবশালী এ ম্যাগজিনের ম্যাটেরিয়েল প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি পাঠক-দর্শকদের কাছে পৌঁছে ওয়েবসাইট, নিউজলেটার, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্রডকাস্ট এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে। ইন্ক-৫০০০ নামের মর্যাদাপূর্ণ এই বর্ষ তালিকাটি ১৯৮২ সাল থেকে প্রকাশ করে আসছে।