২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে যুক্তরাজ্য আ.লীগের আলোচনাসভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত
বিশেষ সংবাদদাতা
ভয়াল ২১শে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ভার্চুয়াল আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভার শুরুতে পচাত্তরের ১৫ই আগস্টের কালো রাতে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে ঘাতকের বুলেটে শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার’সহ অন্যান্য সকল শহীদ এবং ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করেন- বিশিষ্ট লেখক, বিদগ্ধ গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে” গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী। প্রধান আলোচক হিসাবে যোগদান করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন- ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা প্রমান করেছে- সন্ত্রাস দ্বারা প্রতিপক্ষকে নির্মূল করা যায় না।
দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার জন্য বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রসী অপতৎপরতায় আমাদের অনেক প্রিয় মানুষকে আমরা হারিয়েছি, অনেক দেশপ্রেমিক মানুষকে হারিয়েছি কিন্তু ক্ষমতা হারাইনি। তিনি বলেন- সন্ত্রাস দ্বারা বিএনপি-জামায়াত কখনও ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
তিনি আশঙ্ক্ষা প্রকাশ করে বলেন- ভবিষ্যতেও (আগামি নির্বাচনের আগে) তারা বড় ধরনের সন্ত্রাস করার পরিকল্পনা করে রাখছে। একটা হত্যাকান্ড ঘটাবে এবং দেশে অস্তির পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন- ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড ছিলো ভোরের আলো-আঁধারেতে আর ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড গোধুলী লগ্নের আলো-আঁধারেতে। অন্ধকারের পেতাত্মারা নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে, আওয়ামী লীগকে করতে চেয়েছিলো নেতৃত্বশূণ্য, মুছে দিতে চেয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে।
সেতুমন্ত্রী বলেন- “আমাদের আশার ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন আল্লাহর অশেষ কৃপায় বেঁচে গেলেও ততোক্ষণে আমরা হারিয়েছি বেগম আইভি রহমান ও ২২ জন নেতাকর্মী’সহ মোট ২৪ জনকে, আর আহত হয়েছেন হাজার খানেক মানুষ।”
ওবায়দুল কাদের স্মৃতিচারণ করে বলেন- “২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আমিও আহত হয়েছি। অপারেশনে সব স্প্রিন্টার বের করা সম্ভব হয়নি। এখনও অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় সেই স্প্রিন্টারের ব্যথা অনুভব করি।”
তিনি বলেন- বঙ্গবন্ধু হত্যার ২৯ বছর পর সেদিন তাদের টার্গেট ছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করা। পচাত্তরের বুলেট ২০০৪ সালে আবার আসে প্রাণঘাতি গ্রেনেড হয়ে। মন্ত্রী বলেন- এই হত্যাকান্ডের বিচার এবং তদন্ত বাঁধাগ্রস্ত করতে যা যা প্রয়োজন, সবই করেছে তৎকালীন চার দলীয় জোট সরকার। তিনি বলেন- পেছন থেকে ছুরি মারা, বিশ্বাসঘাতকতা আর হত্যার রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করছে বিএনপি।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন- বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্যবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা তিনি এক মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। শেখ হাসিনা আছেন বলে উন্নয়ন, অগ্রগতি, প্রাপ্তি, সমৃদ্ধির ঔশ্বর্যে উদ্ভাসিত হচ্ছে বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের চোখের ভাষা, মনের ভাষা অনায়াসে বুঝতে পারেন বলেই শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন জনমানুষের মনে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের স্বপ্নগুলো অচিরেই নোঙর করবে অর্জনের সোনালী দ্বীপে।
সভাপতির বক্তব্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন- জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য অনেক বার চেষ্টা করা হয়েছে, তন্মোধ্যে অন্যতম একটি দিন ২১ আগস্ট। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে এক নারকীয় গ্রেনেড হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী বেগম আইভি রহমান’সহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন আরও অনেকজন।
তিনি বলেন- আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। শরীরে গ্রেনেডের স্প্রিন্টার আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সেসময় হামলা চালানো হয় এবং পরবর্তীতে সকল আলামত নষ্ট করে দেওয়া হয় যেন এই নারকীয় গ্রেনেড হামলার কোন বিচার না হয়।
তিনি ভার্চ্যুয়াল এই সভায় উপস্থিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দানের জন্য প্রধান অতিথি আব্দুল গাফফার চৌধুরী, প্রধান আলোচক ওবায়দুল কাদের’সহ সভায় অংশগ্রহনকারী সকল স্থরের নেতাকর্মীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। একই সাথে বিএনপি-জামায়াত’সহ সকল অপশক্তির দেশ বিরুধী সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সোচ্চার থেকে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সকলকে কাজ করার জন্য তিনি বিশেষভাবে আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই ভার্চ্যুয়াল সভা ও দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে যুক্ত ছিলেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবুল হাসেম, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, সহ-সভাপতি শাহ আজিজুর রহমান, সহ-সভাপতি হরমুজ আলী, সহ-সভাপতি এম এ রহিম, লন্ডন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক লালা মিয়া, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক শাহ ফাহিম আহমেদ, প্রবাস কল্যাণ সম্পাদক আনছারুল হক, জনসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক রবিন পাল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আবুল কালাম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক খছরুজ্জামান খছরু, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক এস এ সুজন মিয়া, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক শাহেব আলী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহুর রহমান মিসবাহ, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক তারিক আহমেদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মেহের নিগার চৌধুরী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ছুরুক আলী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ফয়জুর রহমান খান, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিছবাহ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাওসার চৌধুরী, সহ-দপ্তর সম্পাদক লুৎফুর রহমান সাহেদ, সহ-প্রচার সম্পাদক খছরুজ্জামান খছরু।
যুক্তরাজ্যের ডরসেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত আফজাল, ডরসেট আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য, এসএমএস মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান দানবীর সেলিম জে আহমেদ, ইভস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল লেইছ, আক্তার ভূঁইয়া মিরর, আলীম হোসেন, আলিমুজ্জামান, আলতাফুর রহমান মুজাহিদ, লন্ডন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ওয়েছ, লন্ডন মহানগর আওয়ামী লীগের আঙ্গুর আলী, আনছার আলী, আনোয়ার আলী, আসাদুর রহমান, মহিলা লীগের আছমা ইসলাম, বাবুল হোসাইন প্রমুখ।
পরিশেষে বঙ্গবন্ধু’সহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সুস্বাস্থ ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন- ব্রিকলেন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নজরুল ইসলাম।