লন্ডনে এক টুকরো শাবিপ্রবি : সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা
সময় সংগ্রহ
সাজু আহমদ, লন্ডন থেকে : বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারের দিনব্যাপী এক বিশাল মিলনমেলা ঘটেছিলো লন্ডনের ইলফোর্ডের ভ্যালেনটাইন পার্কের বিশাল প্রান্তরে। গত রোববার (২২ আগস্ট) পার্কের লেক, ফুল আর পাখিদের কলকাকলির সাথে সাস্টিয়ানদের আড্ডা ছিল সারাদিন।
দুইবার তারিখ পিছানোর পর ও এত কম সময়ের নোটিশ এ প্রায় ১২০ জনের উপস্তিতি আমাকে বিস্মিত করেছে কিন্তূ আবার মনে করে দিয়েছে আমেরিকান সিজিপিস সিস্টেমে পড়ালেখা করা ছাত্রকালীন কঠোর নিয়মানুবর্তিতার কথা!
মাত্র ৪/৫ জনের কঠোর পরিশ্রমের ফসল এই অনুষ্ঠানে রোদ ও মেঘের লুকোচুরির বেশরম আবহাওয়ার মধ্যে ও কি ছিলো না অনুষ্টানে! সিলেটি ধামাইল গানের সুরে সুরে মহিলাদের খেলা ছিল, ছেলেদের দৌড় ছিল আর ছিল বাচ্চাদের শারীরিক কসরতের প্রতিযোগিতা।
পোর্টসমাউথ থেকে রিডিং, লন্ডন থেকে মিল্টন কিন্স বাদ পড়েনি কোন সাস্টিয়ান। তবুও আমরা মিস করেছি আমাদের প্রতিবারের যাত্রী বেলাল ভাই, মুর্শেদ ভাই, রাজ্জাক ভাই, খালেদ নূর ভাই, মুজিব ভাই, তারেক ভাই, রনি, বন্ধু বাবলু, কাসেম ভাই, বার্মিংহাম এর শাহীন ভাই, বেডফোর্ডের মতিন ভাই আর বন্ধু সঞ্জিতকে।
কাবেরী ভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী, আমাদের ভাবির নিজ হাতে বানাবো ১২০ টি সমসা, সাফিন ভাই এর স্ত্রীর জিবে জল আনা নিজের হাতে বানানো মিষ্টি, আর নুরুজ্জামান ও জাবেদ ভাইদের চিকেন নাগেট, সাফিন ভাই এর কয়েকশত সিদ্ধ ডিম (করোনা প্রতিরোধে কার্যকরী!), শিরিন তান্দুরীর বিরানি আর তারকা ডাল মুখে লেগে আছে এখনো, আহারে এভাবে যদি প্রতিদিন ভ্যালেনটাইন পার্কে ভ্যালেনটাইন দের মেলা বসত আর সাথে বেহেস্তি খাবার জোটত।
আমাদের ত্রি রত্ন আমাদের অলটাইম ভিপি কাবেরী ভাই। সদা ইউকে সাস্টিয়ানদের একাউন্ট এর দায়িত্বে থাকা জাবেদ ভাই আর তৌহিদ ভাই ছাড়া অনুষ্ঠান শুধু আমাদের কল্পনাতে ই থাকতো।
আরিফ ভাই এর গাড়ি দুর্ঘটনাতে দুমড়ে মুচড়ে গেলো, কিন্তূ সব ফেলে তিনি আমাদের প্রোগ্রামে হাজির ভাবি নিয়ে, এত প্রেম এত মায়া সাস্টিয়ান ভাই ব্রাদারদের একে অপরের প্রতি, এগুলো কোথায় রাখবো।
আমাদের সপ্তম ব্যাচের রুমি তার বোন আরেক সাস্টিয়ান রুজি আপাকে নিয়ে প্রতিবার হাজির হয়। আমাদের আরেক ব্যাচমেট মোস্তাক ও বরাবর হাজির, তবে সোসিওলজি আর সোশ্যাল ওয়ার্কার দের আধিপত্ত বরাবরের মতো বেশি। সবচেয়ে বড় পাওনা ছিল লাকির নামকরা স্বামী কবি ও চ্যানেল এস এর সংবাদ পাঠক তৌহিদ শাকিল ভাইকে নিয়ে আসা ও আমাদের শাহীন ভাই এর প্রথম আসা সাস্টিয়ান ইউকের অনুষ্ঠানে।
চ্যানেল এস এর আমার গাও এর উপস্থাপক সাফিন ভাই এর সাথে ছিলাম অনেকক্ষন। নুরুজ্জামান ভাই, আশরাফ ভাই, চির তরুণ ফাহিম ও পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখা সুশান্ত দা, অন্তূ, আসিফ, সোহান আর ক্যামেরার কারসাজিতে অপরূপ ছবি তোলার কারিগর রুমান ভাই, আমাদের বাংলা স্কুল এর শিক্ষক বিলেতে পিএইচডি করতে আসা মাহবুব, আমি কাকে রেখে কার কথা বলবো, এ যে সবাই আত্মার আত্মীয়।
শেষ হয়ে ও হইলো না শেষ। অনুষ্ঠান শেষে ও আড্ডা চললো গুধুলী বেলা পর্যন্ত। আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ, কোন কিছুই বাদ গেলো না, সমাজ, সংসার, ধর্ম, বিলেত ও বাংলাদেশের জীবনমান, সব কিছু উদ্ধার করা হলো, আড্ডার ফাঁকে দেখলাম কাবেরী ভাই উনার ছেলেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন। সকালে গতবার অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আখলাক কে দেখলাম এবার তার বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে।
সাস্টিয়ানদের পরিবারের প্রতি যে একাগ্রতা এর জন্যই শেষ আড্ডায় কথা হলো আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এদেশের বৈরী পরিবেশ যেমন প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ (Institutional Racism) অথবা আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত ও পেশাদারিত্ব (personal and professional development) এর উন্নতিতে আমাদের নিজেদের সম্পদ (resource) ব্যবহার করার কথা।
আমাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, গবেষক, শিক্ষক কিংবা প্রতিশ্রুতিশীল তরুনের ত অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন সবাইকে একসাথে করে একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কারণ এই বিলেত ই আমাদের বেশিরভাগের ই হবে শেষ ঠিকানা…
তাই আসুন যারা এখনো স্কটল্যান্ড থেকে কর্নওয়াল, পোর্টসমাউথ থেকে বোর্নমাউথ, আইল অফ ডগস থেকে আইল অফ ম্যান এ বসবাস করেন, তারা সাস্টিয়ান ইউকের ছায়া তলে এক হই। বীণে সুতোয় মালা গাঁথি, বিলেতে গড়ে তুলি এক টুকরো শাবিপ্রবি, যা অন্য সবার চেয়ে ভিন্ন, সবার থেকে অনন্য।