সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ
বিশেষ সংবাদদাতা
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও তার মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করায় সম্প্রতি পদত্যাগ করেন অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কমিটিতে তৃণমূলের নেতাদের মূল্যায়ন না করা, ত্যাগী নেতাদের অপমান ও অপদস্থ করায় সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শাখার স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সিলেট নগরের মিরাবাজারস্থ একটি হোটেলের হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট জেলার ১৪টি উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- এক যুগ ধরে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখে জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাদেরকে বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্য, এমনকি কমিটিতে ব্যাংক কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি হাস্যকর কমিটি উপহার দেওয়া হয়েছে। রাজপথের পরিক্ষিত পরিশ্রমী নেতা মওদুদুল হক মওদুদ সদ্যবিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ককে নতুন ঘোষিত কমিটির ৩১ নম্বর সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের দুইবারের কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিনকে ৩৮ নম্বর সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক বেলালকে সদস্য, সদর উপজেলার আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদিরকে সদস্য ও আলতাফ হোসেন বিলালকে ৬১ নম্বর সদস্য রেখে অপমান, অপদস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন- কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও সিলেট জেলার সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্বে সিলেটের রাজপথের আলোচিত আন্দোলনের মধ্যে এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর দীর্ঘ আন্দোলন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে বিতাড়িত হওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৯৪ দিন অবরোধের কঠিন কর্মসূচি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার জিয়ারতের লক্ষ্যে সিলেটে আগমনে বাধা দেওয়া যুবলীগ-ছাত্রলীগকে প্রতিহত করে নেত্রীকে সসম্মানে সার্কিট হাউজে পৌঁছানো, ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল, মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধনসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সময় অপপ্রচার, হুলিয়া ও সাজানো রায়ের প্রতিবাদে রাজপথে সকল আন্দোলন-সংগ্রামের ভূমিকায় উপজেলা ও পৌরসভার আন্দোলনের পাশাপাশি জেলা ও মহানগরের সকল কর্মসূচিতে নিজেদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ ত্যাগ ও পরিশ্রম করেছি এবং অর্ধশতাধিক মামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আজ কমিটি ঘোষণায় রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে-পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের এক ফোঁটা ঘামের মূল্যই রাখেনি আমাদের এই প্রিয় সংগঠনটি।
আলতাফ হোসেন বিলাল বলেন- ইতোমধ্যে আমাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমের ন্যায় ইনসাফ থেকে বঞ্চিত ও অপমান, অপদস্থ করার কারণে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক ও শিক্ষাগুরু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান গত ১৮ আগস্ট পদত্যাগসহ ৩৬ বছরের দীর্ঘ রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন। সিলেটে বিএনপি প্রতিষ্ঠায় অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান পারিবারিক অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝে দলকে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি বলেন- আমরা আমাদের সোনালি সময় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলে ব্যয় করেছি। আমরা যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন বাজি রেখেছি, রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছি, সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েছি, আজ প্রিয় সংগঠন আমাদের তামাশায় রূপান্তরিত করেছে। আমাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়া আলোচিত সংগঠন সিলেট স্বেচ্ছাসেবক দল। আজ সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যদের হাতে নিমজ্জিত। আমরা যারা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্যদের নেতৃত্বে কাজ করা আমাদের জন্য অপমান ও লজ্জাজনক। তাই আমরা স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন- যেখানে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন মুখ্য হওয়া উচিত ছিল, সেখানে একটি বিশেষ মহলের কারণে আজ তা বিফলে পর্যবসিত হয়েছে। আমরা দলকে সেবা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দল আমাদের সেই সেবা নিতে চাচ্ছে না। বিশেষ এক ব্যক্তিকে সিলেট বিএনপি লিজ দিয়ে এই দলকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতেও ত্যাগী নেতৃবৃন্দ বঞ্চিত হবেন।
পদত্যাগকারী নেতাকর্মীরা হলেন- সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদির, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সুজন মিয়া, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাসান আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হেলাল আহমদ, গোলাপগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাজু আহমদ চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন, কানাইঘাট পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাচ্চু, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল খয়ের, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন বতুল্লা, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক এখলাছুর রহমান, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক আহমদ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজা, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক কাওছার আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শেখ মো. সাবের আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মিসবাহ আহমদ, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সালমান আহমদ নান্টু, জালাল উদ্দিন, রাজু আহমদ, আখতার আলী, কালাম আহমদ, মখলিছ আহমদ, আরিফ আহমদ, আব্দুল আহাদ পারভেজ, সিদ্দেক আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজান আহমদ, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক বদরুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল ইসলাম বাচ্চু, মো. আছলাম, সাদিকুর রহমান বাবলু, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক কামাল হোসেন, মাহবুবুল আলম শাহিন, রুমেল আহমদ, সাইফুল উল্যা আহমদ, জামিল আহমদ, কিবরিয়া আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল হোসেন, সামাদুর রেজা, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাজ্জাদ আলী শিপলু ও শেখ শাহজাহান আহমদ। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শাখার নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আমিন আহমদ, মিছবাহুর রহমান, খোকন মিয়া, আলা উদ্দিন আলী, শমসের হোসেন, হান্নান আহমদ, রাব্বি হোসেন, দিলওয়ার হোসেন, শায়েস্তাউর রহমান, আলাল মিয়া, বদরুল ইসলাম, মিনহাজ উদ্দিন, শহিদ আহমদ, জাকারিয়া হোসেন, আহমেদ জামিল, রুম্মান আহমদ, ফয়েজ আহমদ প্রমুখ।