ম্যানহোলেই ২৬ বছর ধরে সুখে সংসার করছেন এক দম্পতি
সময় সংগ্রহ
সত্যিই মানুষের এক অদ্ভুত জীবন। কারো ঠাঁই হয় দশতলায়, কারো আবার গাছতলায়। পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে- একদল সব পেয়েও অসুখী, অন্য দল কিছু না পেয়েও সুখী। আজ এমনি এক ব্যক্তি সম্পর্কে জানাবো যে, তার জীবনে কিছু না পেয়ে তারপরও খুব সুখী। সুখ টাকা পয়সা দিয়ে কেনা যায় না। যার প্রমাণ, ম্যানহোলের মধ্যে বসবাসকারী এই ব্যক্তি। নাম তার মিগুয়েল রেসট্রিপো।
তিনি এক বছর দুই বছর নয়, টানা ২৬ বছর ধরে ম্যানহোলের মধ্যে বাস করছেন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! তেমনটাই হয়েছে কলোম্বিয়ার এই দম্পতির জীবনে। ২৬ বছর ম্যানহোলের মধ্যে থেকেও জীবন নিয়ে তাদের নেই কোনো অভিযোগ!
তাদের কথা- তারা খুব সুখেই আছেন। আর বাকি জীবনটাও এভাবে সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দিতে চান। কলোম্বিয়ার মেডেলিনে বসবাসরত এ ব্যক্তি ২৬ বছর ধরে পরিত্যক্ত এক ম্যানহোলে স্ত্রী আর পালিত এক কুকুর নিয়ে দিব্যি বাস করে আসছেন।
৬৬ বছর বয়সী মিগুয়েল রেসট্রিপো ঘরবাড়িবিহীন নিঃস্ব মানুষদের একজন। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় আশ্রয় হিসেবে ম্যানহোলকেই বেছে নিয়েছেন এই দম্পতি। সঙ্গে পোষা কুকুরটিও। ম্যানহোলে থেকেও সারাক্ষণ আশঙ্কার মধ্যে থাকেন কখন সরকারি কর্মকর্তারা এসে মিগুয়েলদের ম্যানহোল ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে বলেন। আর এ ভয় নিয়েই একেক করে কাটিয়ে দিয়েছেন ২৬টি বছর। সাড়ে চার ফুট বাই ১০ ফুটের এ ম্যানহোলটি উচ্চতায় মাত্র সাড়ে ছয় ফুট। আর এ ছোট জায়গাতেই তারা দিব্যি বেঁচে আছে।
বৃষ্টি এলে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে সব ভিজিয়ে দেয়। এসবের পরও ৬৬ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ স্ত্রী মারিয়া গার্সিয়া আর বস্নাকি নামের কালো কুকুরটিকে নিয়ে বেশ আছেন। ম্যানহোলের নিচেই এক দম্পতির সুখ-স্বপ্নের সংসার। ঘুম থেকে উঠেই চোখ খুলে দেখেন গোল ছোট আকাশ। আর শুরু হয় ম্যানহোলের নিচে তাদের সংসারের কাজ। এটাই দম্পতির ভালোবাসার ঠিকানা। ইন্টারনেট দুনিয়ায় এই দম্পতির খবর প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।
মেডেলিনেই প্রথম পরিচয় হয় মারিয়া ও মিগুয়েলের। ওই সময় দু’জনই ছিলেন মাদকাসক্ত। যে এলাকায় এ দুটো মানুষের ভালোবাসার শুরু হয়, ওই এলাকাটা সংঘর্ষ-সংঘাত ও মাদক পাচারের জন্য কুখ্যাত। ওই সময় রাস্তায় থাকতেন তারা এবং মাদকের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছিল তাদের জীবন।
এরই মধ্যে পরস্পরের সান্নিধ্যে ভিন্নভাবে বাঁচার প্রেরণা খুঁজে পান দুইজন এবং সিদ্ধান্ত নেন তারা মাদক ছেড়ে দেবেন। তবে আশ্রয় দেয়ার মতো দুইজনের পরিবার-পরিজন কেউ ছিল না। তাই ঘর বাঁধার জায়গা হিসেবে নর্দমার ম্যানহোলই বেছে নেন মারিয়া ও মিগুয়েল। এখানেই তারা সম্পূর্ণভাবে মাদকের মরণ-নেশা থেকে বেরিয়ে আসেন। পেয়ে যান নতুন জীবনের সন্ধান।
যাতায়াতের পথে শুকনো পরিত্যক্ত ম্যানহোলটা দেখেই পছন্দ হয়ে যায় দুজনের। মনে মনে ঠিক করে ফেলেন এই ম্যানহোলেই গড়ে তুলবেন নিজেদের সংসার। ম্যানহোলের ভেতরটা পরিষ্কার করে সেটাকেই থাকার উপযোগী করে তোলেন মারিয়া ও মিগুয়েল। ম্যানহোলটিকে আবাসযোগ্য করে তোলার জন্য ওদের যে কত আয়োজন!
এক চিলতে জায়গার মধ্যে ছোট্ট রান্নাঘর, বিছানা, চেয়ার, রঙিন টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক পাখাও আছে ম্যানহোলটির ভেতরে। উৎসব ও ছুটির দিনগুলোতে সুন্দর করে ঘরও সাজান তারা। বিবিসির কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিগুয়েল তো রীতিমতো ভড়কে দেন সাংবাদিককে।
সাংবাদিক মিগুয়েলের ম্যানহোলের জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি এখানে কলোম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের চেয়েও ভালো জীবনযাপন করি। আমি খুবই খুশি এই জীবন-যাপনে। এর চেয়ে বেশি কিছু আর চাই না। শুধু একটাই আবেদন যেন মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই থাকতে পারি।