সিলেটে স্কুলে প্রথমদিন অনুপস্থিত ১ লাখ ৩৩ হাজার ক্ষুদে শিক্ষার্থী
সময় সংগ্রহ
এমজেএইচ জামিল : টানা দেড় বছর পর সারাদেশে খুলেছে স্কুল কলেজ। লকডাউন পরবর্তী স্কুল খোলার প্রথম দিনে সিলেট বিভাগের শুধু প্রাইমারী স্কুলে অনুপস্থিত ছিলো ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫ম শ্রেণীতে অনুপস্থিত ছিলো ৫৭ হাজার ৮৬০ জন এবং ৩য় শ্রেণীতে অনুপস্থিত ছিলো ৭৫ হাজার ৭১০ জন। ১ম দিনে ৩য় শ্রেণীতে উপস্থিতির হার ছিলো ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৫ম শ্রেণীতে উপস্থিতির হার ছিলো ৬৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ৩য় ও ৫ম শ্রেণীতে এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি উদ্বেগের বিষয়। এরমধ্যে কতজন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে এই হিসাব নেই কারো কাছে। তবে রবিবারের চেয়ে সোমবার উপস্থিতির হার একটু বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- গত রবিবার সারা দেশের নায় খুলেছে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ৫ হাজার ৪৬১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১ম দিনে শুধু ৩য় ও ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার নির্দেশনায় শুধু ঐ দুটি ক্লাসের শিক্ষার্থীই স্কুলে আসে। ফলে তাদের উপস্থিতির পরিসংখ্যান আসে। সিলেট বিভাগের ৫ম শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৯১ হাজার ২৩৮ জন। এরমধ্যে ১ম দিনে উপস্থিত হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৮ জন। উপস্থিতির হার ৬৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ৩য় শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৫ জন। এরমধ্যে ১ম দিন উপস্থিত হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়- সিলেট জেলায় ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬২ হাজার ৬৫২ জন। এরমধ্যে ১ম দিন উপস্থিত হয় ৪৪ হাজার ২২ জন। উপস্থিতির হার ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ জেলায় ৩য় শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থী ৬৮ হাজার ৭৪৮ জন। এরমধ্যে উপস্থিত হয় ৪৬ হাজার ৮ জন। উপস্থিতির হার ৬৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সুনামগঞ্জ জেলায় ৫ম শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থী ৫৫ হাজার ৭৯০ জন। এরমধ্যে ১ম দিন উপস্থিত ছিল ৩৯ হাজার ৯৬৭ জন। উপস্থিতির হার ৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ঐ জেলায় ৩য় শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থী ৭১ হাজার ২৬৮ জন। এরমধ্যে ১ম দিন উপস্থিত ছিলো ৪৯ হাজার ৫১২ জন। উপস্থিতির হার ৬৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
হবিগঞ্জ জেলায় ৫ম শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থী ৩৯ হাজার ২৫৮ জন। ১ম দিনে উপস্থিত হয় ২৫ হাজার ৯৫৩ জন। উপস্থিতির হার ৬৬ দশমিক ১১ শতাংশ। ঐ জেলায় ৩য় শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থী ৫১ হাজার ৬২২ জন। এরমধ্যে ১ম দিন উপস্থিত হয় ৩২ হাজার ৮০১ জন। উপস্থিতির হার ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মৌলভীবাজার জেলায় ৫ম শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থী ৩৩ হাজার ৫৩৮ জন। এরমধ্যে ১ম দিনে উপস্থিত হয় ২৩ হাজার ৪৩৬ জন। উপস্থিতির হার ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ঐ জেলায় ৩য় শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থী ৩৮ হাজার ১৫৭ জন। এরমধ্যে ১ম দিনে উপস্থিত হয় ২৫ হাজার ৭৬৪ জন। উপস্থিতির হার ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।
উপস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়- ৫ম শ্রেণীতে সর্বোচ্চ ৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল সুনামগঞ্জে। ৩য় শ্রেণীতেও সর্বোচ্চ ৬৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো সুনামগঞ্জে। ৫ম ও ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থীর উপস্থিতির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিলো হবিগঞ্জ জেলা। তাদের ৫ম শ্রেণীতে ৬৬ দশমিক ১১ শতাংশ ও ৩য় শ্রেণীতে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো। ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির দিক দিয়ে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে সিলেট জেলা আছে ২য় অবস্থানে। তবে ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির দিক থেকে ৬৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে সিলেট আছে ৩য় অবস্থানে। ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির দিক থেকে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা রয়েছে ৩য় স্থানে। তবে ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির দিক থেকে ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা ২য় স্থানে রয়েছে। ৩য় ও ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। ৫ম শ্রেণীতে তাদের উপস্থিতি ৬৬ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ৩য় শ্রেণীতে তাদের উপস্থিতি ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিলেট সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আব্দুল বাকী চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন- ১ম দিনে উপস্থিত হতে পারেনি বলে সবাই ঝরে পড়েছে এমনটা সমীচিন মনে করি না। কারণ দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পর প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা স্কুলমূখী নয়। তাদেরকে পাঠদানে ফিরিয়ে আনতে কিছু সময় লাগবে। ঝরে পড়া একটা চলমান প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক সময়েও অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে থাকে। যারা ঝরে পড়ার পড়ে গেছে। তবে কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরতে একটু সময় লাগবে। দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে স্কুলে এসেছে। কিছু অভিভাবক চেষ্টা করেও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর কিছু অভিভাবক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে তাদের সন্তানদের আপাতত স্কুলে পাঠানো থেকে বিরত রাখছেন। এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই স্কুলে ক্লাস স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন- দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক হতে পারছে না। ১ম দিনে ৩য় ও ৫ম শ্রেণী মিলে গড় উপস্থিতি ছিলো ৬৫ শতাংশ। ২য় দিন সোমবার ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতি ছিলো প্রায় ৭০ শতাংশ। আশা করি প্রতিদিনই উপস্থিতি বাড়বে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন করে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ক্লাস হবে। আর প্রতিদিন হবে ৫ম শ্রেণীর ক্লাস। শিক্ষার্থীদের এমন ক্লাসের সাথে মানিয়ে নিতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে উপস্থিতি বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা নিয়মিত বিষয়টি মনিটরিং করছি।