প্রকৃতির অকৃত্রিম, অনাবিল, অফুরন্ত বহুমাত্রিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। এর প্রতি পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পাহাড়, নদী ও হাওরের নির্মল উজ্জ্বলতা।
নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, প্রবাল দ্বীপ, সমুদ্র সৈকত, হাওর-বাওড়, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, পুরাকীর্তিসহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান নিয়ে আমাদের এই দেশ। হাওর অঞ্চলের সাগরসদৃশ বিস্তীর্ণ জলরাশি এক অপরূপ মহিমায় মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
দ্বীপের মতো করে গড়ে উঠা ঘরবাড়িগুলো বর্ষাকালে যেমন চোখজুড়ানো দৃশ্যপট তৈরি করে, তেমনি শীতের কুয়াশায় আচ্ছন্ন হাওরাঞ্চলে পাখ-পাখালিদের কলতান কিংবা শুষ্ক মৌসুমের পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদের ছড়াছড়ি হাওরকে এক শিল্পীর হাতের সুনিপুণ চিত্রপটের রূপ দেয়।
বর্ষায় হাওরের দখিনা বাতাস যখন পালতোলা নৌকাগুলোকে শন শন শব্দে উড়িয়ে নিয়ে চলে এবং সেই সাথে বিস্তীর্ণ জলরাশির ছন্দের তালে তালে ভেসে যাওয়া প্রকৃতিতে যোগ করে সরলতার নতুন মাত্রা।রাতের হাওর এলাকায় ডিঙি নৌকাগুলোর ভরপানিতে কুপিবাতি জ্বালিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য কিংবা চাঁদের আলোয় আলোকিত চঞ্চল ঢেউগুলোর চিকমিক করা হৃদয়কাড়া সৌন্দর্য যেকারো স্মৃতিপটে দাগ কাটবে। আর এই মোহনীয় প্রকৃতির রূপ বৃদ্ধি পায় শ্রাবণের দমকা বাতাসের সাথে গর্জে উঠা জলরাশির মেলবন্ধনে।
সিলেট থেকে শান্তিগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৪৮ কিলোমিটার। এই উপজেলায় রয়েছে একাধিক হাওর। এই হাওরগুলোকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।
পানিতে দ্বীপের মত ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের খেলা, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা, ছোট ছোট জলাবন এমন সব অভিজ্ঞতার খোরাক পেতে চাইলে শান্তিগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর বিকল্প নেই।বর্ষা মৌসুমে শান্তিগঞ্জের হাওর বৈচিত্র্যপিয়াসী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে হাওরের নবনির্মিত স্পটগুলো মুখরিত হয়ে উঠছে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যে।
লেখাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া’র ‘পর্যটনে বিস্ময় হাওর’ শিরোনামের একটি কলাম থেকে সংগৃহীত আর ছবিগুলো তুলেছেন : নোহান আরেফিন নেওয়াজ।