সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবি-সাহিত্যিকদের ৮ দাবী
সময় সিলেট ডেস্ক
‘জাগো মানুষ, রুখে দাও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস’ এই স্লোগানকে ধারণ করে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের উদ্যোগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
কুমিল্লা’সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা-ভাংচুর ও হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন- কুমিল্লার এক পূজামণ্ডপে কোরান শরীফ অবমাননা করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে, তা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক। এর রেশ ধরে চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুর’সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বাড়িঘরে সংগঠিত হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। সরকারের বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন- বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দেশে একাত্তরে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর গত পঞ্চাশ বছরে প্রতিটি সরকার সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস-আঁতাত করে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় মেতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দিয়েছে। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ উপড়ে ফেলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
সমাবেশে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়ে। দাবিগুলো পড়ে শোনান কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। সমাপনী বক্তব্য রাখেন কবি শাহেদ কায়েস।
দাবিগুলো হচ্ছে :
- ১. এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করা।
- ২. রামু, নাসিরনগর, শাল্লা, কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী ও রংপুরে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার প্রকৃত কারণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা ও প্রতিটি ঘটনার বিচার করা। এবং অতীতে সাম্প্রদায়িক হামলার মতো অভিযুক্ত অনেক ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রকাশ্যে কর্মরত দেখা যায়। তাদেরকে চিহ্নিত করে বহিষ্কার ও বিচার করা।
- ৩. ফেসবুক, ইউটিইউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ধর্মসভা তথা ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িক ও নারীববিদ্বেষী বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া।
- ৪. স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক পাঠ বিলুপ্ত করে অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।
- ৫. বহু জাতি এবং ধর্মসম্প্রদায়ের এই দেশের সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করা।
- ৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা।
- ৭. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের সংস্কৃতিচর্চার (নাটক, গান, নৃত্য, যাত্রাপালা, পালাগান, বাউলগান) প্রসার ঘটানো। পাশাপাশি স্বাধীন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় প্রাণিত করা।
- ৮. দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি শোয়াইব জিবরান, কবি ও প্রাবন্ধিক মাসুদুজ্জামান, কবি টোকন ঠাকুর, সাংবাদিক নূর সাফা জুলহাস, কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, কবি সাকিরা পারভীন সুমা, কবি আফরোজা সোমা, গল্পকার মোজাফফর হোসেন, লেখক লোপা মমতাজ, কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ, শিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক রেজা ঘটক, লেখক ও অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা, কথাসাহিত্যিক মনি হায়দারসহ আরও অনেকে।