সিলেটে এবার বন্য পাখির ‘ভক্ষক’ পুলিশ কর্মকর্তা
সময় সংগ্রহ
তবে কেবল পুলিশ কর্মকর্তাই না, এর আগে গেলো বছরের ডিসেম্বর মাসে একই জায়গায় পাখির মাংস দিয়ে নৈশভোজ করেছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ কাউন্সিলর। সে সময় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হলেও নেওয়া হয়নি তেমন কোন আইনি পদক্ষেপ। যার কারণে এমন ঘটনা বার বার হয় বলে মন্তব্য সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর। তিনি বলেন, যারা আইন বাস্তবায়ন করবে তারাই যখন আইন ভঙ্গ করে তখন সাধারণ জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
মামলা, অভিযান আটক কিংবা সতর্কতা কোন কিছুতে সিলেটে থামছে না বন্য পাখি বিক্রি কিংবা খাবার। সেই সাথে সিলেটের হরিপুর এলাকায় রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রচার চালিয়েই হয় রান্না করা পাখির মাংস বিক্রি। এসব রেস্টুরেন্টগুলোতে বন্য পাখির মাংস খাওয়া থেকে বাদ পড়ছেন না সিসিক কাউন্সিলর কিংবা সরকারী কর্মকর্তা। এবার এ তালিকায় যুক্ত হলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি) অলক কান্তি শর্মা। জন্মদিন উপলক্ষে তিনি দলবলে পাখির মাংস দিয়ে নৈশভোজ করেছেন। যার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সেই সাথে আইনের সঠিক বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সেই সাথে রক্ষককে ‘ভক্ষক’ হিসেবেই আবিষ্কার করছেন সাধারণ মানুষ।
জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ডিবির এ কর্মকর্তা হরিপুরের তারু মিয়া রেস্টুরেন্টে পাখির মাংস দিয়ে খাওয়া-দাওয়ার সময় তাদের তোলা একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। স্বপন দাস নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবি পোস্ট করে ডিবির ওই কর্মকর্তাকে ট্যাগ করে এতে লিখা হয়, ‘বড় ভাই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এএসপি অলক শর্মা ভাইয়ের জন্মদিনে পাখির মাংস দিয়ে রাতের খাবার।’ মুহূর্তে এর একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে অলক শর্মার পাখির মাংসে জন্মদিনের ভোজের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে এই পুলিশ কর্মকর্তার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি লিখেন, ‘কারে আর কি বলবো! সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এএসপি অলক শর্মা জন্মদিন উপলক্ষে পাখির মাংস খেতে হরিপুরে সদলবলে গিয়েছেন। একজন বিসিএস কর্মকর্তার যদি দেশের আইনকানুনের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ না থাকে তবে আর সাধারণ মানুষকে দোষারোপ করে কি করবো?
এ ব্যাপারে আব্দুল করিম কিম সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করেও হরিপুরের এসব রেস্টুরেন্টে পাখির মাংস বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তার কারণ হলো সরকারি এসব কর্মকর্তার ইন্ধন। তারা এখানে নিয়মিত ক্রেতা হন। যার কারণে তারা সাহস পায়। আবার তারা সামাজিক মাধ্যমে এসবের প্রচারও করেন।’
তবে এগুলো বন্য পাখি নয় বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত অলক শর্মা। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমার জন্মদিন উপলক্ষে কয়েকটি ছোট ভাই সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো। যাওয়ার পর হয়ত পুলিশ শুনে দোকান মালিক বন্য পাখি লুকিয়ে রেখে আমাদের কোয়েল পাখির মাংস দিয়েছে। তবে ছোট ভাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে পাখির মাংস বলেছে। এটি উচিৎ হয়নি। আর আমি জানতামও না এখানে বন্য পাখির মাংস বিক্রি হয়।’
তবে অলক শর্মার এমন বক্তব্যকে দায় এড়ানোর চেষ্টা উল্লেখ করে আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘অলক শর্মা পড়াশোনা করেছেন সিলেটে এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন, তারাও দীর্ঘদিন ধরে সিলেটেই আছেন এবং জানেন সেখানে কী বিক্রি হয় ও কী খেতে সবাই সেখানে যান।’
এদিকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন কর্মকর্তা মোল্লা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক। এসব ব্যাপারে সর্বদাই আমরা পুলিশের সহায়তা চাই, কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা এরকম করে থাকলে এটি জঘন্য অন্যায়। আমি ব্যাপারটি দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তবে কেবল পুলিশ কর্মকর্তাই না, এর আগে গেলো বছরের ডিসেম্বর মাসে একই জায়গায় পাখির মাংস দিয়ে নৈশভোজ করেছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ কাউন্সিলর। সে সময় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হলেও নেওয়া হয়নি তেমন কোন আইনি পদক্ষেপ। যার কারণে এমন ঘটনা বার বার হয় বলে মন্তব্য সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর। তিনি বলেন, যারা আইন বাস্তবায়ন করবে তারাই যখন আইন ভঙ্গ করে তখন সাধারণ জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
অপরদিকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন কর্মকর্তা মোল্লা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিসিকের পাঁচ কাউন্সিলরের ব্যাপারে আমরা ঘটনার পর পর জৈন্তাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করে ছবি জমা দিয়েছিলাম। তাঁদেরকে বলেছিলাম অপরাধীদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে। এখন তারা কি করল তা জৈন্তাপুর থানা ভালো বলতে পারবে।
তবে সিসিকের পাঁচ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বন বিভাগের দেওয়া অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জৈন্তাপুর থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, ‘আমার জানা নেই।’