হাওর এলাকার আগাম বন্যা ও শীত সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবন
স্টাফ রিপোর্টার
মার্চ মাসের চৈতালী ঢল আর এপ্রিল মাসের বৈশাখী ঢল। চোখের সামনে আধা পাকা ধান গাছ তলিয়ে যাওয়ার করুণ দৃশ্য হাওর এলাকার কৃষকদেরকে প্রায় সময়ই মোকাবেলা করতে হয়। এই ঢল অনেক কৃষককে করে দেয় নিঃস্ব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১ বছর পূর্বে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করে। এর পরীক্ষণ প্লট হিসাবে ব্যবহার করা হয় কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওর, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শীবপাশা বাকাটিয়ার হাওর, বানিয়াচং উপজেলার মকার হাওর, নবীগঞ্জ উপজেলার গুঙ্গিয়াজুরী হাওর, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হাওর, শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওর।
গত মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) হবিগঞ্জের তিনটি হাওরে নতুন উদ্ভাবিত জাতের পরীক্ষণ প্লটের ট্রায়াল দেখতে যান গবেষণার সাথে জড়িত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, ব্রি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং গবেষণার মূখ্য পরীক্ষক পার্থ সারথী বিশ্বাস, হবিগঞ্জ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, ব্রির বিজ্ঞানী হাবিবুর রহমান, ওয়াজিয়া আফরিন, রফিকুল ইসলাম, ইমাম আহমেদ, ইরির ড. মোবারক হোসেন ও ড. রফিকুল ইসলাম।
পার্থ সারথী বিশ্বাস জানান, ব্রির হবিগঞ্জ স্টেশন ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আসাম অববাহিকার হাওরের জন্য উপযোগী জাত উদ্ভাবনের কাজ করে আসছে। এখান থেকে আবিষ্কৃত হবিগঞ্জ বোরো-৬ যাকে পশুশাইল বলে তার মাঝে শীত সহনশীল ও খরা সহনশীল জিন পাওয়া গেছে। এখানকার উদ্ভাবিত রাতা বোরো ও টেপি বোরোতেও শীত সহনশীলতার জিন পাওয়া গেছে। ব্রি হবিগঞ্জ থেকে উদ্ভাবিত হাসি (ব্রি ১৭), মঙ্গল (ব্রি ১৮) ও শাহজালাল (ব্রি ১৯) এর গাছগুলো ছিলো লম্বা। হঠাৎ পানি আসলেও গাছ লম্বা হওয়ায় পানির বৃদ্ধি সহ্য করতে পারত। বীজ সরবরাহ চেইন ভেঙে যাওয়ায় এই জাতের বদলে ২৮ ও ২৯ আবাদ করতে থাকায় এই জাতগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে ছিল। আমরা ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের জাত পেয়ে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করেছি। পশুসাইল এর জিন, ভুটান, নেপাল, কুরিয়া ও ফিলিপাইন থেকে কিছু জাত পিতৃলাইন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পরীক্ষণ ফিল্ডে নতুন এই জাতের বেশ কয়েকটি লাইন দ্রুত অগ্রসর হয়েছে। আমরা দ্রুত এই জাতটি নতুন জাত হিসাবে অবমুক্ত করতে পারব বলে আশাবাদী।
তিনি বলেন- আমরা যে জাতটি উদ্ভাবন করতে যাচ্ছি তার ফলন হবে হেক্টর প্রতি ৭ টন। ফসল এর মেয়াদ হবে ব্রি-২৮ এর সমান ১৫০ দিন। যেহেতু শীত টলারেন্স আছে তাই চাইলে অক্টোবরেই এর বীজতলা তৈরি করা যাবে। শীতে এর বীজতলার কোনো ক্ষতি হবে না।
পার্থ সারথী বলেন, আমরা সোমবার নিকলীর হাওর দেখেছি। মঙ্গলবার হবিগঞ্জের হাওর দেখেছি। বুধবার সুনামগঞ্জের হাওর দেখব। এখন পর্যন্ত আমরা যে ফলাফল পেয়েছি তাতে আমরা আশাবাদী হাওর এলাকার দুঃখ লাঘবে নতুন জাতটি উপযোগী হবে।
ড. জীবন কৃষ্ণ বলেন, নতুন জাতটি উদ্ভাবনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ২০১৭ সালে যখন হাওর এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই অবস্থা বিবেচনা করে। নতুন জাতটি হবে স্বল্প মেয়াদী ও শীত সহনশীল। ফলে আগাম বন্যা আসার আগেই কৃষকের গোলায় চলে যাবে এই ধান। নতুন জাত উদ্ভাবনে হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ধান পশুসাইলকে প্যারেন্ট হিসাবে নেয়া হয়েছে। পশুসাইলই ছিল প্রথম উদ্ভাবিত বন্যামুক্ত জাত।
তিনি আরও বলেন, প্রচলিত বিভিন্ন জাত যদি কেউ আবাদ করেন তাহলে শীত রোগের কারনে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উৎপাদন হয় হেক্টর প্রতি ৪ টন। কিন্তু নতুন জাতটির উৎপাদন হবে হেক্টর প্রতি ৭ টন এবং শীত রোগ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।