নদীতে বিষ ঢেলে দুর্বৃত্তদের মাছ শিকার : পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা
সময় সিলেট ডেস্ক
বরিশালের বাবুগঞ্জে সন্ধ্যা, সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন এক শ্রেণীর অসাধু মাছ শিকারী। তবে এরা শুধু নদীতেই নয় বিভিন্ন মাছের ঘের এবং খালেও কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে পরিবেশের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে বলে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
তারা জানান— এ পদ্ধতিতে শিকার করা মাছ খেলে যেমন কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকারক তেমনি মাছের বংশ বিনষ্ট হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ— নদীতে স্রোতের গতিবেগ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে বিষ প্রয়োগ করতে শুরু করে এই অসাধু চক্র। এরপর শিকারের সেই মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান— প্রতি বছর নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। বিগত সময়ে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে আসছিল যে চক্র, তাদের বিচারের মুখোমুখি না করায় এবারও তারা বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন। এই প্রক্রিয়ায় উৎসাহিত হয়ে শুধু পুরোনোরাই নয়; সঙ্গে এবার নতুনরাও যোগ হয়েছে।
জানা যায়— এলাকার বিভিন্ন বাজার থেকে কীটনাশক কেনেন তারা। রাতের শেষ ভাগে নদীর কিনারে নির্দিষ্ট স্থানে বিষ প্রয়োগ করেন। কিছু সময় পর এই বিষের অসহ্য যন্ত্রণায় ছোট-বড় চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ লাফিয়ে উঠে তীরে। এসব মাছ তারাই নদীর কিনার থেকে কুড়িয়ে তোলেন। পরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন এই মাছ।
বিষ প্রয়োগের ক্রিয়া শুরু হতে কিছু সময় পার হওয়ায় এই চক্রের লোকজনকে কেউ সহজে ধরতে পারেননি। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রকৃত মৎস্যজীবীদের।
বাবুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ বলেন— শুকনা মৌসুম এলে নদীতে স্রোতের গতি কমে আসে। এই সময় অসাধু মাছ শিকারীরা বিষ প্রয়োগ করেন। বিষের তীব্র দুর্গন্ধে নদীর কিনারে ভেসে উঠে মাছ। চিংড়ি মাছ শুকনায় লাফিয়ে উঠে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল জানান— কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার একটি অনৈতিক কাজ। যেখানে বিষ প্রয়োগ করা হয় সেখানে মাছের বংশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি যারা এই মাছ খাবে তাদের কিডনি অকেজোর মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে এ ধরনের জনসচেতনতা মূলক সভার আয়োজন করা হবে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুবাস সরকার বলেন— কেমিক্যাল দিয়ে মাছ শিকার করা হলে, এগুলো মাছের চেয়ে মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এসব মাছ খেলে কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড অকেজোর মতো জটিল রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
বাবুগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন— মাছের ঘেরে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকারের অভিযোগ পেয়েছি। খুব শিগগিরই অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।