কলকাতায় এএফসি কাপে জয় দিয়ে শুরু বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের
স্পোর্টস ডেস্ক
‘টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ জয় তো অর্ধেক কাজ শেষ!’
ফুটবলে বহুলব্যবহৃত আপ্তবাক্যটি মেনে থাকলে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে বসুন্ধরা কিংসের অর্ধেক কাজ শেষ। এএফসি কাপে গতকাল নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়েছে কিংস।
কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বসুন্ধরার হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন গাম্বিয়া জাতীয় দলের স্ট্রাইকার নুহা মারং।
গত এএফসি কাপে এই মাজিয়াকেই ২-০ গোলে হারিয়ে এএফসি কাপ শুরু করেছিল কিংস। এক বছরের ব্যবধানে কিংসের জয়ে গোলের ব্যবধান কমেছে একটি। আজও ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারত, যদি সাইড পোস্ট বাধা হয়ে না দাঁড়াত বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নদের সামনে।
এ ছাড়া গোল মিস করেছেন নুহা ও মিগেল ফিগেরা। যদিও ম্যাচে বল পজেশনে কিছুটা এগিয়ে ছিল মালদ্বীপের ক্লাবটি। কিংসের ‘হাই লাইন’ রক্ষণভাগের পেছনে বল ফেলে কিংসের গোলমুখের তালা খোলার চেষ্টা করেছে তারা।
বেশ কয়েকবার বিশ্বনাথ ঘোষ, খালিদ শাফিদের রক্ষণভাগকে ঝাঁকিও দিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিংস গোলকিপার আনিসুর রহমান সে চ্যালেঞ্জ উতরে গেছেন খুব ভালোভাবেই।
সাধারণত ৪-৩-৩ ফরমেশনে দলকে খেলান কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন। গতকাল রক্ষণভাগের ওপর বাড়তি ছায়া দিতে মাঝমাঠে ‘ডাবল পিভট’ হিসেবে মাসুক মিয়া ও সোহেল রানাকে খেলিয়েছেন, তাতে কিংসের ছকটা দাঁড়াল ৪-২-৩-১।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কাজটা ভালোই করেছেন এ জুটি। তাঁদের ছায়া কিংস রক্ষণভাগকে দিয়েছে বাড়তি সুরক্ষা। তবে মাজিয়ার লেফট উইঙ্গার হামজা ও স্ট্রাইকার কর্নেলের গতির সামনে বারবার ভুগতে দেখা গেছে কিংসের রাইটব্যাক তারিক কাজী ও সেন্টারব্যাক খালিদ শাফিকে।
কিংসের আক্রমণের জ্বালানি বাঁ প্রান্ত। সেখানে লেফটব্যাক ইয়াছিন আরাফাত ও উইঙ্গার রবসনের সঙ্গে স্ট্রাইকারের পেছন থেকে খেলা মিগেল ফিগেরার রসায়নটা জমে উঠেছিল বেশ।
১১ মিনিটের মধ্যেই তিনটি গোলের সুযোগও তৈরি করে নেয় তারা। এর মধ্যে ৪ মিনিটে ইয়াছিনের ক্রস থেকে নুহার হেড মাজিয়া ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে কর্নার হয়। ১১ মিনিটে রবসনের ট্রেডমার্ক শট সাইড পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
আগামী শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে কিংসের প্রতিপক্ষ ভারতের মোহনবাগান। গতকাল মোহনবাগান দিনের প্রথম ম্যাচে ৪-২ গোলে হেরেছে গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে।
রবসনকে নিয়ে ভালো হোমওয়ার্ক করেই খেলোয়াড়দের নামিয়েছিলেন মাজিয়ার সার্বিয়ান কোচ মিওদরাগ জেসিচ। রবসনের পায়ে বল যাওয়া মানেই দু-তিনজন মিলে ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডকে পাহারায় রাখা। বল নিয়ে বাঁ প্রান্ত থেকে বক্সের মধ্যে কোনাকুনি ট্রেড মার্ক দৌড়াতে রবসনকে বেগ পেতে হয়েছে বেশ।
গোল করার কাজটি করতে হয়েছে নুহাকে। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্বে স্প্যানিশ ফুটবলের তৃতীয় স্তরের লিগ থেকে নুহাকে দলে টেনেছে কিংস। লিগে গাম্বিয়া জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকারের পারফরম্যান্স একেবারেই সাদামাটা। তাই তাঁর জায়গায় অতিথি হিসেবে নেওয়া হয়েছে দুই বিদেশি ফরোয়ার্ডকে। এএফসি কাপের মতো বড় মঞ্চে নিজের জাতটা ঠিকই চেনালেন নুহা।
৩৩ মিনিটে দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন তিনি। মাজিয়া ডিফেন্ডার ও গোলকিপারের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন গাম্বিয়া জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকার।
মাঝমাঠ থেকে সোহেল রানার বাতাসে বাড়িয়ে দেওয়া বল কে বিপদমুক্ত করবেন এ নিয়ে ধন্দে পড়ে যান মাজিয়ার এক সেন্টারব্যাক ও গোলকিপার। দুজনের সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে মাঝ থেকে হেডে বল পোস্টে পাঠিয়ে দেন নুহা।
এর আগে ২৬ মিনিমেট গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন নুহা। তবে নুহার গোলেই যেহেতু শেষ পর্যন্ত জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাঁর গোলের সুযোগ নষ্ট করাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখাই যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে অঙ্ক কষে ফুটবল খেলেছে কিংস। আগ্রাসী আক্রমণে না গিয়ে বল দখলে রাখার চেষ্টা করেছে তারা। তবুও ৭৬ মিনিটে গোলকিপারকে একা পেয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগেল। তাঁর বাঁ পায়ের শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেছেন মাজিয়া গোলকিপার। শেষ দিকে গতির ঝড় তুলে বেশ কয়েকবার কিংস রক্ষণভাগে কাঁপুনি ধরিয়েছেন মাজিয়ার লেফট উইঙ্গার হামজা। তাঁর একটি শট দুর্দান্ত সেভ দিয়েছেন আনিসুর।
শেষের দিকে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছেন এলিটা কিংসলি। বসুন্ধরার জার্সিতে তো অনেকবারই খেলেছেন, জাতীয়তা বদলানোর পর গতকাল প্রথমবার কিংসলি নেমেছেন বাংলাদেশি পরিচয়ে।
আগামী শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে কিংসের প্রতিপক্ষ ভারতের মোহনবাগান। বুধবার মোহনবাগান দিনের প্রথম ম্যাচে ৪-২ গোলে হেরেছে গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে।