ভয়াবহ বন্যায় কাবু জৈন্তাপুর: নিম্ন আয়ের মানুষের হাহাকার
জৈন্তাপুর সংবাদদাতা
টানা বৃষ্টি ও ঢলে ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যাকে অতিক্রম করতে যাচ্ছে। বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যায় কবলিত। ইতোমধ্যে সারী ও করিচ নদীর আশপাশের এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নদীর পানি উপচে পড়ায় জৈন্তাপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ ও গবাদী পশু গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
অতিরিক্ত হারে পানি বাড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। পানি ডুকে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি পানি বন্দী মানুষ।
অপর দিকে অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলার চরিকাটা, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়নে বাড়ছে পাহাড় ধসের সংখ্যাও। বুধবার সকালে উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের বাউরভাগ দক্ষিন এলাকায় পাহড় ধসে দুইজন আহত হয়েছে। পাহাড় ধস বাড়লেও বন্ধ হচ্ছেনা পাহাড় কর্তন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে— বন্যা কবলিত এলাকা উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদার পাড়া, হর্নি, বাইরাখেল, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ী, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, হেলিরাই। জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর, বিরাইমারা, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষীপুর, ২ নম্বর লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, নলজুরী হাওর। ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের বালিদাঁড়া, লালাখাল, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ, পুঞ্জী ৫ নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু ভাটপাড়া, মাঝপাড়া, দত্তপাড়া, বালিপাড়া, নয়াগ্রাম, নয়াগ্রাম দক্ষিন, ভেলোপাড়া, ৬ নম্বর চিকনাগুল ইউনিয়নের কান্দী ৪ নম্বর দরবস্ত ইউনিয়নের মহাইল, মুটগুঞ্জা, সেনগ্রাম, গর্দনা, ফরফরা, শুকইনপুর, রনিফৌদ, সাতারখাইসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারী নদীর পানি বিপৎসীমার ০.৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়— ‘আগামী ১০ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিলেটে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে ১৭-১৯ জুন ভারী বর্ষণ হতে পারে। বাকি দিনগুলোতে থেমে থেমে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং ২৩ জুন পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।
হেমু ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন বলেন— দুই দিন থেকে পরিবার নিয়ে গৃহহীন, নেই কোন খাবার ভেজা কাপড় পড়ে দিন কাটছে। গরু ও হাস মুরগী নিয়ে মহা বিপদে। যেখানে আশ্রয় নিয়েছি সেখানেও পানি উঠে যাচ্ছে। আমার এলাকা’সহ আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে রান্না-বান্না’সহ নানা সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার ত্রাণসামগ্রী পাওয়া যায়নি।
হেমু পাখিটেকি গ্রামের রাজমিস্ত্রী ফারুক আহমদ বলেন— আমার অস্তিত্ব শেষ, দুই দুইবার বন্যায় এখন নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছি। আমার ঘর বাড়িতে পানি। উপজেলা প্রশাসনও আমাদের কোন খোঁজ নিচ্ছেন না। এখন সব আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন— ‘এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় বিপুল সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। অনেক আশ্রয় কেন্দ্র পানির নিচে। জেলা থেকে ২৪ মেট্রিকটন চল পেয়েছি সে গুলো ইউপি চেয়ারম্যানদের নিকট হস্থান্তর করা হয়েছে। পানি বন্দী মানুষদের জন্য ২ লক্ষ টাকার শুকনা খাবার পেকেট করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাউকে কিছু দিতে পারিনি। টানা বৃষ্টির কারণে উপজেলায় পাহাড় ধসের সংখ্যা ও বেড়েছে তাই পাহাড় ঘেসে থাকা মানুষকে নির্দষ্ট স্থনে যাওয়ার অনুরোধ করছি।
বুধবার (১১ মে) থেকে উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়। এর মধ্যে গত ২০ ও ২৫ মে পানি কমতে শুরু করে। বন্যা পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু পুরোপুরি উন্নতি হওয়ার আগে আবার এসব অঞ্চল বন্যার কবলে পড়ছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে দ্বিগুণ হারে।