বঞ্চিত কেন ‘দেশসেরা মেয়র’ আরিফুল হক চৌধুরী?
সময় সময়
নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র’সহ চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটি মেয়রকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হলেও সেই তালিকায় নেই বিভাগীয় নগরী সিলেটের সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নাম। অথচ সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই কর্মদক্ষতা ও কর্মগুণে ইতোমধ্যে প্রশাসন’সহ সারা দেশের মানুষের মনোযোগ ও প্রশংসা অর্জন করেছেন। বিষয়টি বিস্মিত করেছে সিলেট’সহ গোটা দেশের সকল সচেতন ও বিবেকবান মানুষকে।
জানা গেছে— মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাচ্ছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে— ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও নারায়নগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী’কে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন।
অনেকের প্রশ্ন; নারায়নগঞ্জের মতো একটি তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ সিটির মেয়র’কে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা দেয়া হলেও সিলেট নগরীর মেয়রকে এই মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করা হলো কেনো? অথচ কর্মসম্পাদন চুক্তির প্রতিবেদন ও মূল্যায়নে দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম হয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)।
লক্ষণীয় যে, গত জুন মাসে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর ও শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২১-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে সিসিকের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হাতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন দেশ সেরা পুরস্কার তুলে দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব।
সরকারের নির্ধারিত মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসারে অর্জিত ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৭ দশমিক ১১ নম্বর পেয়ে দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে প্রথম এবং ২০টি দপ্তর ও সংস্থার মধ্যে ২য় স্থান অর্জন করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সিলেট সিটি কর্পোর্শেন।
সিসিকের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবৎ গোটা দেশে একটি আলোচিত নাম। অনেকেই তাকে কর্মবীর ও উন্নয়নকর্মে রোল মডেল হিসেবে মনে করেন।
সিটি সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তার কর্মদক্ষতা ও শ্রম দেখে অনেক সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের বিভিন্ন সময় ঈর্ষাবোধ করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে রাজশাহী ও চট্টগ্রামের মেয়রকে আরিফুল হকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেছে। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীও কিছু দিন আগে সিলেট সফরে এসে ‘মেয়র তো ভালোই কাজ করছেন’ বলে আরিফুল হকের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করেন।
বলা বাহুল্য; আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটে তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে দলমত ও আদর্শের উর্ধ্বে ওঠে নগরীর উন্নয়নে সকল শ্রেণীর মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু এমন দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ মেয়রকে মন্ত্রী দূরে থাক, প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়ার তালিকা থেকেও বাদ দেয়ার বিষয়টি গোটা সিলেটের জনগণকে যুগপৎ ক্ষুব্ধ ও আহত করেছে। অনেকে ইতোমধ্যে তাদের ক্ষোভের কথা ফোন করে আমাদের অবহিত করেছেন। বিষয়টি প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীদের মাঝেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকে ইতোমধ্যে ফোনে তাদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেনে। তাদের প্রশ্ন, এটা কি সিলেটকে বঞ্চিত করার চিরাচরিত আচরণের ধারাবাহিকতা ও অংশ কি-না।
প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা প্রদান ও পিএস নিয়োগ না দেয়ার প্রোটোকলের ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে বলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। এতে তার উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন।
তার এমন দাবি ও সিলেট নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে তথা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় তথা সরকারের উচিত ছিলো, তাকে প্রতিমন্ত্রীর মদর্যাদা দিয়ে সিলেটের উন্নয়নে উৎসাহ প্রদান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা করা হচ্ছে না।
অনেকের প্রশ্ন, আরিফুল হক চৌধুরীর সরকার দলীয় মেয়র না হওয়ায় কি এমন বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে? যদি তা-ই হয়, তবে সিলেট নগরীর স্বার্থ তথা জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে দলীয় সংকীর্ণতাকে উর্ধ্বে স্থান দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা সিলেটবাসী’সহ দেশবাসীর কাছে নিন্দিত হয়েই থাকবেন।