মজুরী বৃদ্ধি ও শ্রমিকবান্ধব মজুরী বোর্ডের দাবীতে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি
স্টাফ রিপোর্টার
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নূন্যতম ৩০০ টাকা মজুরী নির্ধারণ ও শ্রমিকবান্ধব মজুরী বোর্ড বাস্তবায়নের দাবীতে সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা তিন দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির প্রথম দিন মঙ্গলবার দুই ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্ব স্ব বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি ও শ্রমিক নেতাদের উদ্যোগে সর্বস্তরের শ্রমিকরা বাগান কার্যালয় ও চা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে এ কর্মবিরতি পালন করেছেন।
জানা যায়— মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট ভ্যালির ২৩টি চা বাগানে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের লাক্কাতুরা চা বাগানের সামনে মিছিল-সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান— দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানোর পরও কোনো সাড়া মিলছে না। দিনের পর দিন জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য বাড়ছে; এতে পরিবার নিয়ে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ একেবারেই অসম্ভব।
এমতাবস্থায় ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবি জানিয়ে প্রায় দুইবছর আগে আবেদন করলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। প্রতি দুইবছর অন্তর অন্তর চুক্তি নবায়ন করার নিয়ম থাকলেও এবার তা বাস্তবায়নে বাগান কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
একই দাবীতে বাংলাদেশ টি বোর্ডের মালিকানাধীন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিউ সমনবাগ চা বাগান কার্যালয়ের সামনে প্রায় ৪ হাজার চা শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেছেন। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই কর্মবিরতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— চা শ্রমিক নেতা নারায়ন কালোয়ার, ফজল তাতী, সীতারাম গড়াইত, মতিলাল ঘাটোয়ার, গঙ্গা সাওতাল প্রমুখ।
পাথারিয়া চা বাগান কার্যালয় প্রাঙ্গণে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক দুই ঘন্টা সমাবেশ করেছে। কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— পঞ্চায়েত সভাপতি মোহন লাল, সাধারণ সম্পাদক জয় বোনর্জি, ভ্যালি সহ-সভাপতি শ্রীমতি বাউরি, শ্রমিক নেতা পরেশ বাউরি, অরুনা গোয়ালা প্রমুখ।
এদিকে, জুড়ী উপজেলার সোনারূপা চা বাগানের ডিভিশন পুচি চা বাগানের প্রায় ৪০০ শ্রমিক বাগানে কাজ রেখে রাস্তার পাশে বসে কর্মবিরতি পালন করছেন। সমাবেশে বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মতি রুদ্র পাল বলেন— দীর্ঘদিন থেকে ৩০০ টাকা মজুরীর জন্য আমরা আন্দোলন করে আসছি, মজুরী বোর্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মানুষ হিসেবে বেচেঁ থাকার জন্য আমাদের এ আন্দোলন। ১২০ টাকা থেকে ১৪ টাকা আমাদের হাজিরা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব আনা হয়ে ছিল। যা দিয়ে কোন শ্রমিকের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো অসম্ভব।
এ চা বাগানের শ্রমিক রিনা রুদ্রপাল, স্যাম সুন্দর চৌহান, খুলশী কুর্মী বলেন— আমাদের রাস্তার বেহাল দশা, সপ্তাহে একদিন হাসপাতালে গেলে সারাদিন লাগে ডাক্তার দেখাতে, তা ও আবার সব রোগের জন্য একটি প্যারাসিটাল একটা এন্টাসিড দেয়। আমাদের বসবাসের ঘরগুলো ও অনুপযুক্ত। ১২০ টাকা মজুরীতে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ অসম্ভব ব্যাপার। তারা অবিলম্বে ৩০০ টাকা মজুরী কার্যকরের দাবী জানান।
কাপনা পাহাড় চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অজন্তী বাউরীর সভাপতিত্বে এ বাগানে কর্মবিরতীতে উপস্থিত ছিলেন— জুড়ী ভ্যালী চা শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কমল বোনার্জী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমলা বাউরী, অর্থ সম্পাদক নীরেন বোনার্জী, ইউপি সদস্য ধীরেন বোনার্জী, সদস্য সঞ্জয় চাষা প্রমুখ।