ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব: কাটেনি আতঙ্ক, এখনও খোলা আকাশের নিচে বহু পরিবার
অতিথি সংবাদদাতা
ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে : এখনও আতঙ্ক কাটেনি। চোখের পাতা এক করতে পারছে না শিশুগুলো। রাত হলে ভয় আরও বাড়ে তাদের। মনে করে আবারো বুঝি ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে দেবে সবকিছু। চোখেমুখে আতঙ্কের স্পষ্ট ছাপ।
‘আরেকবার তুফান আইবোনি?’ মনের ভিতর একরাজ্য ভয় নিয়ে মা-বাবা বা পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বার বার এমন প্রশ্নই করে যায় অবুঝ শিশুরা। অনেক প্রবীণদের মন থেকেও সেই দুঃসহ স্মৃতি মোচতে পারছেন না। শিশুদের পাশাপাশি সে রাতের দুর্দমনীয় স্মৃতি আওড়ে বেড়াচ্ছেন বৃদ্ধরাও। শত চেষ্টা করেও ভুলতে পারছেন না চালের টিন, ঘরের বাঁশ-কাঠ, পোশাক-পরিচ্ছদের উড়াউড়ি, বিদ্যুৎ চমকানো আর বড় বড় গাছ উপড়ে পরার ভয়ঙ্কর স্মৃতি। ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতি এখনো তাজা ক্ষতিগ্রস্তদের মনে।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পহেলা কার্তিক (১৭ অক্টোবর) সোমবার দিবাগত রাত আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে পাথারিয়া ইউনিয়নের দরগাপুর, আসামমুড়া ও শ্রীনাতপুর গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় ৮০টি ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে ফেলে বড় বড় গাছপালাও। এতে ঘরহীন, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে এসব গ্রামের শতাধিক মানুষ। তাদের কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় নিলেও অধিকাংশ জনই বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে উড়া (খড়কুটো, টিন দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরণের ছোট ঘর) তৈরি করে। ৫ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই মানুষগুলো। প্রথমদিন উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে চাল, ডাল’সহ কিছু শুকনা খাদ্য পেয়েছিলেন তারা। পরে সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ আমিনের কাছ থেকে পেয়েছেন কিছু নগদ অর্থ। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এসব তাদের জন্য একেবারেই অপ্রতুল। তাদের দরকার ঘর তৈরি করার মতো বাঁশ-কাঠ, টিন অথবা পণ্য সমপরিমাণ টাকা। সব টাকা হয় তো সম্ভব নয়, যা-ই দেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তা যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেওয়া হয় সেই দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
দরগাপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মুহাম্মদ খান বলেন— আমরা স্বচক্ষে দেখছি মানুষ খুব কষ্টে আছে। উড়া বেঁধে তাতে অনেক কষ্টে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। এভাবে থাকতে পারবে না। তাদের সাহায্য দরকার। যারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন আমরা অনুরোধ করবো যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে যেন সেই আশ্বাস অনুযায়ী দ্রুত সহযোগিতা করা হয়।
ক্ষতির স্বীকার হওয়া আসামমুড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক হাফিজ আহমদ শাফি বলেন— নিজেদের ঘর বলতে তো আর কিছুই রইলো না। স্ত্রী সন্তানদের শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছি। মা-বাবা, বড়ভাই ও তার পরিবার উঠেছেন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তাদেরও কষ্ট হচ্ছে, তবু থাকতে দিয়েছেন। খাওয়াচ্ছেন আরেক আত্মীয়। এভাবে কতদিন চলবে? আমরা নিঃস্ব মানুষ। কোনো রকমে সংসারটা চালাই। তার উপরে হঠাৎ করে এমন গজব পড়বে তা কখনো ভাবিনি। কিভাবে সামলে উঠবো বুঝতে পারছি না।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাহেব কিছু খাবার পাঠিয়েছিলেন। সাবেক চেয়ারম্যানও কিছু টাকা দিয়েছেন। প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিলেন। আল্লাহ পরে আমরা তাদের হাতের দিকে চেয়ে আছি। যা-ই সহযোগিতা তারা করেন না কেন আমাদের দাবি একটু দ্রুতই যেন সেটা করেন। তাহলে আমরা বেশ উপকৃত হবো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছকিনা আক্তার বলেন— ঘূর্ণিঝড়ের রাতের পর সকালেই আমরা একটি তালিকা তৈরি করিয়েছি। এই তালিকাটি ইতোমধ্যে জেলায় পাঠিয়েছি। আশা করছি রবি-সোমবারের মধ্যে তাদের জন্য আমরা একটি বরাদ্দ পাবো। বরাদ্দ আমাদের হাতে আসলেই দ্রুত তাদেরকে পৌঁছে দেওয়া হবে।