সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা
সময় সিলেট ডেস্ক
দীপালী রানী (৫৪)। বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর এলাকায়। মঙ্গলবার ভোর রাতে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের মেচেরঘাট সীমান্তে এসে বসে আছে। সকাল হলে সীমান্তে কালী পূজা উপলক্ষে দুই বাংলার লোকজনের দেখা করার সুযোগ দিবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার খালাতো বোনের ছেলে জয়ধর বাবুর সাথে দেখা হয়। দেখা হলেও ভাগিনাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেতে পারেনি দীপালী রানী। কারণ তাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই বাংলার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া।
ভাতিজার সাথে দেখা করে ফেরার পথে দীপালী রানী জানান— ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তার খালা-খালু ভারতে চলে যায়। সেই সময় ছোট খালা দুইবোনের সাথে শেষ দেখা হয়। কয়েক বছর আগেও এক বার খালাতো বোনের সাথে দেখা হয়েছিলো দীপালী রানীর। কিন্তু গত বছর তার সেই খালাতো বোন মারা গেলেও যেতে পারে নাই। আজ তার ভাগিনাদের কাছে পেলেও জড়িয়ে ধরে একটু আদর করতে পারে নাই।
দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের মেচেরঘাট সীমান্তে কালী পূজা উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে দুই বাংলার এ মিলন মেলা বসে।
শুধু দীপালী রানী নয়, তার মত শত শত মানুষ সীমান্তে ছুটে এসেছে রক্তের টানে। কাছের লোকজনদের দেখতে পেয়ে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে অনেকই প্রাণের টানে ছুটে এলেও আত্মীয়দের দেখা না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে গেছেন। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে শুরু হওয়া এ মিলন মেলা চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
মিলন মেলায় আসা সফিকুল ইসলাম, রবিন্দ্র নাথ জানান— বছরে একটা দিন আমরা কালী পূজা উপলক্ষে আমাদের আপন জনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পায়। সে যেন অব্যাহত থাকে। আইনের জটিলতা দিয়ে যেন এ মিলন মেলা বন্ধ না হয়।
তারা আরও বলেন— বছরে এমন একটি মিলন মেলা আমাদের মানবিক পৃথিবী তৈরিতে ভুমিকা রাখবে।
পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রবিউল হক মিরন বলেন— এ সীমান্তে প্রতিবছর কালী পূজা উপলক্ষে দুই বাংলার মিলন মেলা বসে। এতে অনেকেই তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুশি মনে বাড়ি ফিরেন। এটা অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।