টিলায় এবার কমলার বাগান বাড়লেও কমেছে ফলন
সময় সংগ্রহ
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি টিলাগুলোতে রয়েছে ছোটবড় স্বপ্নের কমলা বাগিচা। মধ্য অক্টোবর থেকে কমলা পরিপক্ব হতে শুরু করেছে। এখন বাগানগুলো থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে কমলার সুস্বাদু ঘ্রাণ।
বাগানের গাছে গাছে দোল খাচ্ছে কড়া হলুদ রঙের পাকা ও আধপাকা কমলা। তবে এবার জুড়ী উপজেলায় কমলার বাগান বাড়লেও কমেছে এর ফলন। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া ও পানি সেঁচের পরিকল্পিত ব্যবস্থা না থাকায় কমলার ফলন কমেছে।
জানা গেছে— এবারো কিছু কিছু কৃষক পোকামাকড় নিধনে ‘আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এটি পোকামাকড় দমনের সঠিক ও পরীক্ষিত পদ্ধতি। যার ফলে অনেক বাগানে কমলার আকার বড় হয়েছে।
কৃষিবিদদের মতে— কমলা একটি ছায়া পছন্দকারী বৃক্ষ। ফলদ বৃক্ষের ছায়ায় কমলার চাষাবাদ ভাল হয়। ২৫-৩০ সেন্টিমিটার গড় তাপমাত্রা ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান কমলা চাষের সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বসতবিটার উত্তর ও পূর্ব-পাশে চাষাবাদ ভালো হয়।
উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউপির লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল, সাগরনাল ইউনিয়নের পুটিছড়া ও পূর্ব-জুড়ি ইউনিয়নের কালাছড়া, জামকান্দি, দুর্গাপুর এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের টিলা বাড়িগুলোতে কমলা, মাল্টা, বাতাবি লেবু, আদা লেবু, শাসনি ও জাড়া লেবুর বাগান গড়ে উঠেছে। শখের বাগানগুলোতে কাজ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও সঠিকভাবে পরিচর্যায় একেকটি বাগান থেকে প্রতিবছর ৩-৫ লাখ টাকার কমলা বাজারজাত করা সম্ভব। কমলা চাষে যেমন খরচ কম, তেমনি শ্রমও বেশি দিতে হয় না। ফলে কমলা চাষে অত্রাঞ্চলের কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেন। তবে এবার সেই আগ্রহ কমে যাওয়ায় ভালো ফলন হয়নি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে— উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৯৬ হেক্টর জমিতে ২৩০টি কমলার বাগান গড়ে উঠেছে। তবে কৃষি বিভাগের নবজাত সম্প্রসারণে বেড়েছে বাগানের সংখ্যা। গত বছর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল ৯১ হেক্টর জমিতে ৮৪টি বাগান। এ বছর নতুন বেড়েছে প্রায় ১৪৬টি বাগান। তবে এগুলোতে এবার ফলন আসেনি।
ওই অঞ্চলের অধিকাংশ খাসি ও নাগপুরী জাতের কমলার চাষ থাকলেও বর্তমানে কৃষি বিভাগের লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সার ও চারা প্রদান এবং স্প্রে মেশিন প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন বাগান সৃজন করা হয়েছে। এখানে বারি-১, বারি-২ ও দার্জিলিং জাতের কমলার জাতগুলো এ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
কমলা চাষি জয়নাল মিয়া ও খোরশেদ আলম জানান— যখন কমলা গাছে ফুল আসে তখন বৃষ্টি বা সেচের দরকার হয়। এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায়ও পানি সেচের কোনো পরিকল্পিত ব্যবস্থা না থাকার কারণে কমলার ফলনে ধস নেমেছে। কোনোভাবে সময়মতো সেচের ব্যবস্থা করা গেলে ফলন ভালো হতো। প্রতিবছর কমলা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভবান হলেও এ বছর কমলা চাষে যা খরচ হয়েছে তা উঠবে বলে মনে হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিসার জসিম উদ্দিন জানান— কমলা একটি ছায়া পছন্দকারী বৃক্ষ। শুধু একক বাগান হলে সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কৃষকরা যদি সঠিকভাবে সুষম সার ব্যবহার করে এবং পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য নিয়মিত বালাইনাশক স্প্রে ব্যবহার করে তা হলে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি আকারও বড় হবে।
কমলার ফলন কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন— এ বছর খরা অন্য বছরের তুলনায় বেশি ছিল। সেজন্য ফলন ভালো হয়নি।
সৌজন্যে : যুগান্তর