অনেক সাংবাদিকের পরিপক্বতার অভাব আছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার
অনেক সাংবাদিকের মধ্যে পরিপক্বতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন— পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন— অনেক সাংবাদিক তথ্য সম্পূর্ণ না জেনে লিখে দেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর স্মরণসভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করে সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী স্মৃতি ট্রাস্ট।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন— ‘জগ্লুল সব সময় সঠিক তথ্যটা তুলে ধরত। ইদানীংকালে আমাদের যারা নতুন সাংবাদিক, তাদের জগ্লুলকে অধ্যয়ন করা দরকার। কারণ, আমাদের অনেক সাংবাদিকের মধ্যে পরিপক্বতার অভাব আছে। তথ্য সম্পূর্ণ না জেনে লিখে দেয়।’
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকার কারওয়ান বাজারে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
জগ্লুলের মৃত্যুটা খুবই বেদনাদায়ক উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন— ‘বাস থেকে নামতে গিয়ে মৃত্যু, এটা খুবই বেদনাদায়ক। আমার তখন বিশ্বাস ছিল, এই মৃত্যুর পর বাংলাদেশে চলন্ত বাস থেকে কোনো লোক আর নামবেও না, উঠবেও না। দুঃখের বিষয়, এখনো দেখি চলন্ত বাস থেকে লোক নামে। যখনই দেখি, আমার স্মরণ হয় জগ্লুলের কথা।’
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে দুটি জিনিস শিক্ষণীয় রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন— ‘একটি হচ্ছে চলন্ত বাস থেকে যাতে কেউ না নামতে পারে, তা আইন করে বন্ধ করে দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো লোক চলন্ত বাস থেকে নামতে পারে না। কোনো বাস চলন্ত অবস্থায় যাত্রীদের নামাতে পারবে না, এটা আমাদের দেশেও চালু করা। দ্বিতীয়ত, সাংবাদিকেরা যাতে জগ্লুলের মতো ভালো–উন্নত সাংবাদিকতা করতে পারে, সেদিকে তাদের নজর দেওয়া উচিত। সেদিকে নজর দিলে আজকের আলোচনা সার্থক হবে।’
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর স্মৃতিচারণ করে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন— ‘দেশ স্বাধীনের পর যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করি, তখন জগ্লুল সারা দিন বসে থাকত। সে তথ্য সংগ্রহ করত। জানার আগ্রহ খুব ভালো ছিল। মানুষ হিসেবে এত উন্নত হৃদয়ের ছিল যে আমি তাকে খুব মিস করি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন— জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী জ্ঞানী সাংবাদিক ছিলেন। বাংলাদেশের জন্য আদর্শ সাংবাদিকতার পথ রেখে গেছেন। তিনি কখনো কোনো লোককে অসম্মান করতেন না। বন্ধুসুলভ ছিলেন।
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম সাংবাদিক জগ্লুলের সঙ্গে ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা ও তাঁর সঙ্গে মৃত্যুর আগপর্যন্ত নানা স্মৃতির কথা তুলে ধরেন।
কামরুল ইসলাম বলেন— ‘আজ বাংলাদেশে যে অবস্থা চলছে, বিভিন্ন কূটনৈতিক ডেকে একটা গোষ্ঠী বা দল যা করছে, আজ যা হচ্ছে, আমরা দেখছি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কূটনৈতিকদের ডেকে এনে হস্তক্ষেপ করার যে চেষ্টা-অপচেষ্টা বা যে কাজগুলো হচ্ছে, হয়তো জগ্লুল থাকলে এসবের বিরুদ্ধেও তার লেখা সোচ্চার হতো।’
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন— সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর ছেলে নাবিদ আহ্মেদ চৌধূরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাসসের সাবেক এমডি হারুন হাবিব, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন ও হবিগঞ্জের মেয়র শহীদ উদ্দিন চৌধুরী।