সক্ষমতা বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে: এখন ভিড়বে ১০ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
এতদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ নোঙ্গর করতে পারতো। এর চেয়ে বড় জাহাজকে বহির্নোঙ্গরে ভিড়ানো হতো। লাইটার জাহাজে করে সেখান থেকে পণ্য জেটিতে নিয়ে আসতে হতো। তবে চলতি মাসের শেষ থেকে বন্দর জেটিতে ১০ মিটার গভীরতা ও ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ নোঙ্গর করতে পারবে।
এর ফলে আমদানি-রপ্তানিতে সময় ও খরচ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমে আসবে। পাশাপাশি কমবে জাহাজজট। আর এর মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নতুন স্তরে পৌঁছাবে। আজ পরীক্ষামূলকভাবে ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১০ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ ভেড়ানো হবে। আর চলতি মাসের শেষের সপ্তাহে পুরোদমে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন— এতদিন বন্দরে সর্বোচ্চ ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তো। এখন আমরা ১০ মিটার গভীরতা ও ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। বড় জাহাজ ভেড়াতে কর্ণফুলী নদীর মোহনার গভীরতা বৃদ্ধি ও পাইলটদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল পরীক্ষামূলকভাবে বড় জাহাজ ভিড়বে। আর চলতি মাসের শেষের দিকে এই কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে।
জানা যায়— দীর্ঘ সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ১০ মিটার গভীরতা ও ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ ভেড়াতে বড় বাধা ছিল কর্ণফুলী নদীর প্রবেশমুখ অর্থাৎ সাগর ও নদীর সংযোগস্থলের কম গভীরতা। তবে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ এর জরিপে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে বড় জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ গত এক বছর ধরে ৩টি বিষয়ে জরিপ চালিয়েছে।
এরমধ্যে বর্তমানে চ্যানেলের যে অবস্থা এবং জেটি যেভাবে রয়েছে তাতে বন্দরে ঠিক কতো গভীরতাসম্পন্ন এবং দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো যায়, বন্দরের দুই তীরের কী পরিমাণ জায়গা জেটি বা ইয়ার্ড সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা যায় এবং কোন ধরনের পদক্ষেপ নিলে বন্দরে সর্বোচ্চ কতো গভীরতাসম্পন্ন এবং দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো যাবে এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে জরিপটি চলে।
সেই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়— বর্তমানে বন্দরের যে অবকাঠামো রয়েছে তা ব্যবহার করে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তবে বহির্নোঙ্গর ও গুপ্তখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করে নদীর দু’একটি পয়েন্টে ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর রহমান বলেন— ‘গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ যে রিপোর্ট প্রদান করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ জাহাজের ট্রায়াল রান শুরু হবে। এই রানে সফল হলে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোকে বড় জাহাজ পাঠানোর জন্য সার্কুলার দেয়া হবে। তখন বড় জাহাজ এলে বার্থিং দেবো।’
শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন— ১০ মিটার গভীরতা ও ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ চলাচল শুরু হলে আমদানি-রপ্তানি খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ কমে আসবে। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ আর্থিকভাব লাভবান হবেন। পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজটও কমে যাবে।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন— বন্দর জেটিতে এতদিন ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ নোঙ্গর করা যেতো। এখন জেটিতে ১০ মিটার গভীরতা ও ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে আমদানি খরচ অনেক কমে আসবে। এটির পরিধি বেড়ে ১২ মিটার গভীরতার মাদার ভেসেল প্রবেশের সুযোগ তৈরি হলে ব্যবসায়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।