নিউজ পোর্টাল ও আজকের উপোসী সাংবাদিকতা
আকতার সাদিক
গণমাধ্যম সম্পর্কে লিখতে হলে অবশ্যই ব্যাপক স্টাডির প্রয়োজন। আমার লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য মূল ধারার সাংবাদিকতা নয়। আমি মূল ধারার গণমাধ্যমের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অনলাইন সাংবাদিকদের নিয়ে কিছু লেখার প্রয়াস নিচ্ছি। অনলাইন মিডিয়া ইন্টারনেটের পাওয়ারে দেশ ও জাতির কল্যাণে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে তা এখন বলাটা বড় দুষ্কর। যেভাবে দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা নিউজপোর্টাল এবং ফেসবুক পেইজে সাংবাদিকদের লাগামহীন ভুল প্রচারণা শুরু হয়েছে, তা অনলাইন মিডিয়ার জন্য অদূর ভবিষ্যতে সুখবর বয়ে আনবে না নিশ্চিত।
পৃথিবীর ইতিহাসে অনলাইন সংবাদের প্রচার শুরু হয় যুক্তরাজ্যে ১৯৭৪ সালে নিউজরিপোর্ট নামক অনলাইন নিউজপোর্টালের মধ্য দিয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদ শুরুর সময়কাল ২০০৪ বা ০৬। সেই সময়কালে ফেসবুক, ইউটিউবের প্রভাব না থাকায় অনলাইন সাংবাদিকদের দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়নি। মানুষ অনলাইন নিউজপোর্টাল সম্পর্কে এতো জানতো না, মফস্বল এলাকার মানুষ তখন মূল ধারার সাংবাদিকদের ভালো জানতো।
কিন্তু ২০১৪ বা ২০১৫ থেকে মানুষ ব্যাপকভাবে ফেসবুক, নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরুকরে আর এতে অনলাইন মিডিয়ার মোক্ষম সময় মনে করে চিন্তাশীল কিছু সাংবাদিকরা ইন্টারনেটকে সামনে রেখে সুন্দর ও যৌক্তিক নাম দিয়ে শুরু করেন অনলাইন নিউজপোর্টাল এর প্রচারণা। নিজেকে একজন সম্পাদক হিসেবে পরিচিত করেন অনলাইন গণমাধ্যমের জগতে। মূলধারার গণমাধ্যমকে ফলো করে সিস্টেম ডেভলাপ করতে থাকেন অনলাইন সাংবাদিকতায়। অনলাইন সাংবাদিকতায় ভালো উদ্দেশ্য থাকলেও সেটা এখন বিভিন্ন এঙ্গেলে উল্টোদিকে রূপ নিচ্ছে দিন দিন।
শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এসেও শেষ হচ্ছে না আজ নিউজপোর্টাল খোলার প্রতিযোগিতা। পেছনের বাড়ির কুত্তা মরার খবরটি ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করার লোকটিও আজ সাংবাদিক। যে যেমন পারেন হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে নেমে গেছেন মাঠে। যখন তখন মোবাইল নিয়ে দাড়িয়ে শুরু করেন ফেসবুক লাইভ। নিউজের আইনকানুন জানার প্রয়োজন নেই, কারণ নিজেই সম্পাদক নিজেই সাংবাদিক আবার নিজেই উপস্হাপক। হাতে লগো যুক্ত মাইক্রোফোন, গলায় প্রেসকার্ড ঝুলানো। উচ্চারণের বেলায় কখনো আঞ্চলিক কখনো শুব্দভাষার চেষ্টা সব মিলিয়ে চায়নিজ খিচুড়ি! যা দেখে দর্শকরা বিনোদন পায়। তবুও খারাপ কি দেখতে টিভি সাংবাদিক মনে হচ্ছে- এটাইবা ক’জন পারে! তাইনা?
কিন্তু এসব করে দেশের গণমাধ্যমকে বিশ্ব দরবারে কি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব? নাকি গণমধ্যমের বারোটা বাজানোর সংকেত। আসলেই কি এরা লাগামহীনতার পথ চলবে, নাকি মূল ধারার সাংবাদিক বা সিনিয়ররা এদের ব্যাপারে সোচ্চার হবেন।
প্রিন্টস, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়রদের ভাষ্যমতে- অনলাইন সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ, ভাষার উচ্চারণ, উপস্থাপন, সংবাদ লেখার মান’সহ নানান জটিলতা রয়েছে। সিনিয়রদের এ বক্তব্য কোনো ভাবেই এড়িয়ে যাবার নয়। মোট কথা দেশের গণমাধ্যমকে ভালো জায়গায় দাঁড় করাতে চাইলে ভুয়া সাংবাদিক, পেইজ সাংবাদিক, ফেসবুক আইডি সাংবাদিকদের লাগামহীন ভুল প্রচার বন্ধ করে সত্য ও তথ্য অবলম্বনে বস্তুনিষ্টতার সাথে দেশের বিভিন্ন ধারার গণমাধ্যমগুলোকে দায়িত্বশীলতা এবং শুদ্ধতার পথে এগিয়ে নেওয়া এখন সময়ের দাবী।
লেখক : আকতার সাদিক, গণমাধ্যমকর্মী।
[বি.দ্র. : মুক্তকথন বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে দৈনিক সময় সিলেট–এর সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। দৈনিক সময় সিলেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তকথনে প্রকাশিত লেখার দায় দৈনিক সময় সিলেট–এর নয়।]