হিজরী সন: ইতিহাস, গুরুত্ব ও তাৎপর্য
লুকমান হাকিম
মানুষ তাদের প্রয়োজনে, বিভিন্ন কাজের সুবিধার্থে দিন-তারিখ ঠিক রাখতে কোনো না কোনো সনপ্রথা বা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে থাকে। ঐতিহাসিকদের মতে ভূমন্ডলের ওপর মানবজাতির আধিক্য সমাজকে তারিখ, সনপ্রথা ও বর্ষপঞ্জির প্রয়োজনীয়তার দিকে ধাবিত করে। সর্বপ্রথম বর্ষপঞ্জি গণনা শুরু হয় হযরত আদম আ. কে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময়কে ভিত্তি করে। পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্ষপঞ্জির ধারাবাহিকতার ইতিহাস পাওয়া যায়। যথা: হযরত নূহ আ. এর মহাপ্রলয়, হযরত ইব্রাহীম আ. কে অভিশপ্ত নমরুদ কর্তৃক অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা, হযরত ইউসুফ আ. মিসরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হওয়া, মুসা আ. তদানীন্তন জালিমশাহী ফেরাউনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বনী ইসরাইলের বহুধা-বিভক্ত সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে মিসর ছেড়ে চলে যাওয়া, হযরত দাউদ আ. এর নবুওয়াত ও শাসনকাল, এরপর হযরত সোলাইমান আ. এর রাজত্বকাল, হযরত ঈসা আ. এর জন্ম ইত্যাদিকে কেন্দ্র করেই মূলত সমসাময়িকভাবে বর্ষপঞ্জি তারিখ গণনার সূত্রপাত হয় বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা।
পরবর্তী সময়ে প্রত্যেক গোত্র, সম্প্রদায়, জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্ষগণনা শুরু করত। বর্ষগণনার উল্লিখিত প্রথা যেমনটা ছিল অনারবদের মধ্যে, তদ্রূপ প্রচলন ছিল আরব জাতির মধ্যেও। বাসুস যুদ্ধ যা বকর বিন ওয়ায়েল ও বনী যুহাল গোত্রের মধ্যে একটা উষ্ট্রীকে কেন্দ্র করে ৪০ বছর ধরে চলমান ছিল। ওই যুদ্ধকে মূল ভিত্তি বানিয়ে বর্ষগণনার সূত্রপাত করেন আরবরা। এর পরে দাইস যুদ্ধ ও আসহাবে ফীল তথা হস্তিবাহিনীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করা হয়। (উমদাতুল কারী: ১৭/৬৬)
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সন গণনার বিশেষ দু’টি পদ্ধতি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মৌলিক ধারণা দিয়েছেন। ১. চন্দ্র কেন্দ্রিক সন। ২. সূর্য কেন্দ্রিক সন।
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সন গণনার বিশেষ দু’টি পদ্ধতি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মৌলিক ধারণা দিয়েছেন। ১. চন্দ্র কেন্দ্রিক সন। ২. সূর্য কেন্দ্রিক সন। চাঁদের গতি-প্রকৃতি হিসাবে যে সন গণনা করা হয়, সেটাকে বলা হয় চান্দ্রসন, আর সূর্যের গতি-প্রকৃতি হিসাবে যে সন গণনা করা হয়, তাকে বলা হয় সৌরসন। আমাদের দেশে সাধারণ তিনটি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। সেগুলো- ইংরেজী, হিজরী ও বাংলা। বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত ইংরেজী সন হচ্ছে সৌর সন, কিন্তু বর্ষ গণনা শুরু হয়েছে ঈসা আ. এর জন্ম তারিখ থেকে। হিজরী সন হচ্ছে চান্দ্রসন, কিন্তু বর্ষ গণনা শুরু হয়েছে ৬৩৮ খৃস্টাব্দ থেকে এবং সূচনা করা হয়েছে ৬২২ খৃস্টাব্দে রাসুলের হিজরতের ঘটনার সময় থেকে। আর চান্দ্রসনকে সৌরকরণের ফল হলো- বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় ৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলী সন, পরে ‘বঙ্গাব্দ’ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
হিজরী সন ইসলাম পুনর্জাগরণের প্রধান ও অবিসংবাদিত প্রতীক এবং মুসলমানদের বিজয় ও সাফল্যের এক জ্বলন্ত ইতিহাস। উজ্জ্বল কীর্তি ও অমর ঐতিহ্য। সভ্যতা ও সংস্কৃতি উন্নতির যুগে হিজরী সনের গুরুত্ব অনেক। হিজরী সনের প্রণেতা খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমর রা.। এতে কারো দ্বিমত নেই। তবে সূচনাপর্ব ও পদ্ধতি নিয়ে অনেক মতামত পাওয়া যায়। মাইমুন ইবনে মেহরানের দাবি হচ্ছে- হযরত উমর রা. কে একটি পত্র দেওয়া হয়েছে। পত্রটি তাঁর কাছে শাবানে আসার কথা বলা হয়েছে। উমর রা. বলেন- এখানে কি ঐ শাবান যেটা চলে গেছে, নাকি সামনের শাবান না চলমান শাবানের কথা বলা হচ্ছে? অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরামকে একত্রিত করে বলেন- মানুষের জন্য এমন একটি সন নির্ধারণ করুন- যা তাদের জন্য স্মরণ রাখা সহজ। কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন রোমান তারিখ দিয়ে দিন তারিখ গণনা শুরু করতে। এর উপর আপত্তি করা হলো এই বলে যে- এদের বছর দীর্ঘ। তাছাড়া এরা তাদের তারিখকে জুলকারনাইনের (পুরো পৃথিবীতে রাজত্বকারী প্রভাবশালী এক বাদশাহ। সুরা কাহাফে যার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে) জন্মদিনের সাথে সম্পৃক্ত করে। কেউ কেউ বললেন- পারস্য তারিখে দিন-তারিখ গণনা শুরু করতে। এর উপরও আপত্তি এল যে, ওখানকার প্রত্যেক নতুন বাদশাহ পূর্ববর্তী বাদশাহের কার্যক্রমকে অবৈধ করে দেয়। অতঃপর তারা একমত হলেন যে, রাসুল সা. মদীনায় কতদিন ছিলেন হিসেব করা হোক। হিসেব করে দেখলেন-মদীনায় রাসুল সা. দশ বছর ছিলেন। তারপর এই হিজরতকে কেন্দ্র করে তখন থেকেই হিজরী সন গণনা শুরু করা হয়। (মাহজুস সাওয়াব: ১/৩১৬)
আল্লামা শিবলী নুমানী রাহ. আল-ফারুক গ্রন্থে আল বিরুনী রাহ. এর সূত্রে লেখেন- হযরত উমর ফারুক রা. এর খেলাফতকালের তখন চতুর্থ বছর। ৬৩৮ খৃস্টাব্দে (হিজরতের ১৬তম বর্ষে), প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী রা. ইরাক এবং কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একদা হযরত আবু মুসা আশআরী রা. খলীফা উমর রা. এর কাছে এ মর্মে চিঠি লিখলেন যে, ‘আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সম্বলিত যেসব চিঠি আমাদের নিকট পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোন চিঠি কোন দিনের তা নিরুপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এতেকরে আপনার নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে বিভ্রান্তির শিকার হই। অনেক সময় আমরা বিব্রতবোধও করি চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে। যদি আমাদের জন্য দিন-তারিখ ও মাস-সনের একটি ব্যবস্থা করতেন। হযরত আবু মুসা আশআরীর চিঠি পেয়ে খলীফা উমর রা. পরামর্শ সভা ডাকেন। বিশেষজ্ঞ আনসার ও মুহাজির সাহাবাদেরকে নিয়ে পরামর্শ বৈঠক হয়।
একটি বিষয়ে প্রথমে সবাই একমত হন যে, নতুন সাল প্রণয়ন হবে। কিন্তু কখন থেকে শুরু করবেন? পরামর্শদাতাগণ নবীজির জন্ম, ওহীপ্রাপ্তি, হিজরত ও মৃত্যুদিবস চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে বৈঠকে প্রধানত তিনটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। ১. রাসুল সা. এর জন্ম থেকে বর্ষ শুরু করা হোক। ২. রাসুল সা. এর মৃত্যু থেকে বর্ষ শুরু করা হোক। ৩. সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন- আলী রা. এর প্রস্তাব ছিলো, যেদিন রাসুল সা. শিরকের রাজ্য ত্যাগ করে মদীনার পথে হিজরত করেছেন- সেদিন থেকে বর্ষ গণনা শুরু করা হোক। এভাবে বিভিন্ন মতামত আলোচিত হওয়ার পর হযরত উমর রা. প্রত্যেক প্রস্তাবের পর্যালোনা শুরু করে বললেন- হুজুর সা. এর জন্ম থেকে বর্ষ গণনা শুরু করা যাবে না। কারণ খৃস্টান সম্প্রদায় হযরত ঈসা আ. এর জন্ম থেকে খৃস্টীয় সনের গণনা শুরু করেছে। তাছাড়া রাসুলের সঠিক জন্মতারিখ মতভেদপূর্ণ। তাই আমরা তা করতে পারছি না। আবার হুজুর সা. এর ওফাত থেকেও গণনা শুরু করা যাবে না, কারণ এতে হুজুর সা. এর মৃত্যুব্যথা, বেদনা আমাদের মাঝে বারবার উত্থিত হবে এবং শোক পালনের মতো ইসলাম বিরোধী একটি কুপ্রথার পুনরুজ্জীবন হবে। হযরত ওমর রা. এর এই সুক্ষ্ম বক্তব্যকে হযরত উসমান রা. ও হযরত আলী রা. একবাক্যে সমর্থন করেন। অতঃপর হযরত আলী রা. এর প্রস্তাবমত উমর ফারুক রা. হিজরত থেকেই দিনপঞ্জি গণনার সিদ্ধান্ত নেন এবং সবাই সম্মত ও আনন্দিত হন (মাহজুস সাওয়াব: ১/৩১৭)
খলীফায়ে রাশেদ ফারুকে আজমের সিদ্ধান্ত, সাহাবী আবু মুসা আশ’আরীর আবেদন, খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. এর প্রস্তাব এবং ওসমান রা.-সহ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামে নিরঙ্কুশ সমর্থন ও যৌথ প্রচেষ্টায় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরতের দিন থেকে হিজরী সনের ধারাবাহিকতা শুরু হয়।
হিজরত থেকে নতুন সন গণনা শুরুর পেছনে ছিলো অনেক রহস্য। হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন- হিজরতের ঈমানী চেতনার মূল্যায়ন। সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে হিজরতের প্রেমের মর্যাদা দান। হিজরতের ভালোবাসার উচ্চারণ বাড়ানো। মুহাজিরদের মাতৃভূমি ত্যাগের কুরবানীকে স্বীকৃতি প্রদান। আনসারদের পরম সহযোগিতার অমর মূল্যায়ন। পরামর্শসভার বাইরে অবস্থানরত সাধারণ জনতার হিজরতপ্রেমের অপার্থিব আগ্রহের শ্রদ্ধা। মুহাজির মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টির অনুসরণ-সহ আরো বিভিন্ন রহস্য।
মোটকথা, খলীফায়ে রাশেদ ফারুকে আজমের সিদ্ধান্ত, সাহাবী আবু মুসা আশ’আরীর আবেদন, খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. এর প্রস্তাব এবং ওসমান রা.-সহ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামে নিরঙ্কুশ সমর্থন ও যৌথ প্রচেষ্টায় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরতের দিন থেকে হিজরী সনের ধারাবাহিকতা শুরু হয়। প্রচলন শুরু হয় ৬৩৮ খৃস্টাব্দে মুতাবেক ১৬, মতান্তরে ১৭ বা ১৮ হিজরীতে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় দেড়শ’ কোটি মুসলমানের নিকট তা অতীব মর্যাদাপূর্ণ এক আমানত। অস্তিত্বের সাক্ষী। চেতনার মিনার। ঘুরে দাঁড়ানোর সূত্র।
ভারতবর্ষে হিজরী সনের প্রচলন: ৬৩৮ খৃস্টাব্দে হিজরী সনের প্রবর্তনের এক বছর পরই আরববণিকদের আগমনের ফলে ভারতবর্ষে ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে হিজরী সনও ক্রমান্বয়ে এখানে প্রচার পেতে থাকে। ৫৯৮ হিজরী মোতাবেক ১২০৯ খৃস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গবিজয়ের মাধ্যমে বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস সূচিত হয়। এ সময় থেকে ভারতবর্ষে হিজরী সন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে এবং জাতীয় সনে পরিণত হয়। এ ধারা ১৭৫৭ খৃস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, উপমহাদেশে প্রায় ৫৫০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজরী সন স্বীকৃত ছিল। ইংরেজ শাসনকালে বাংলা অঞ্চলে ইংরেজী সনের প্রচলন হয়। পনের শতকের দিকের এ দেশের বিভিন্ন স্থাপত্যের গায়ে হিজরী সনের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছিল। এক সময় মুসলমানদের দৈনন্দিন কাজে সন তারিখ গণনায় আগে হিজরী সন ব্যবহার করে তার পর বাংলা ইংরেজীকে উল্লেখ করা হত। কিন্তু হায়! আজকের পরিস্থিতি বলতে গেলে কেবল আহত হতে হয়। বেদনায় তনুমন কেঁপে ওঠে।
হিজরী সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর আদর্শ ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। যার সঙ্গে জড়িত আছে বিশ্বমানবতার মুক্তির কালজয়ী আদর্শ রাসুল সা. এর প্রিয় ও পুণ্যময় জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় গমনের ঐতিহাসিক ঘটনা।
তাৎপর্য প্রসঙ্গ: হিজরী সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর আদর্শ ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। যার সঙ্গে জড়িত আছে বিশ্বমানবতার মুক্তির কালজয়ী আদর্শ রাসুল সা. এর প্রিয় ও পুণ্যময় জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় গমনের ঐতিহাসিক ঘটনা। হিজরী সন-তারিখের তাৎপর্য মুসলিম জীবনে অনেক। এর সাথে সম্পৃক্ত বিশ্ব মুসলিমের তাহজীব-তামাদ্দুন, ইসলামের সোনালী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় নির্দেশনা; যেমন: নামাজ, রোজা, হজ, ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, শবে মিরাজ, মহিলার অপেক্ষাকালীন সময়-সহ ধর্মীয় নানান আচার-অনুষ্ঠান। আল্লাহপাক বলেন- “লোকেরা আপনাকে চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, তা হলো মানুষের এবং হজের জন্য সময় নির্ধারণকারী।” (বাকারা: ১৮৯) হাদীসে এসেছে, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ভাঙ্গ। (মুসলিম: ১/৩৪৭) মুসলিম উম্মাহর জন্য চন্দ্র মাসের হিসাব রাখা ফরজে কেফায়া। নবী সা. ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত। যার অনুসরন, অনুকরণ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য পুণ্যময় ও কল্যাণকর বিষয়।
মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. বলেন- সৌর হিসাব রাখা ও ব্যবহার করা একেবারেই নাজায়েজ নয় বরং এই এখতিয়ার থাকবে, কোনো ব্যক্তি নামাজ, রোজা, জাকাত, ইদ্দতের ক্ষেত্রে চান্দ্রবর্ষের হিসাব ব্যবহার করবে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে সৌর হিসাব ব্যবহার করবে। কিন্তু শর্ত হলো, সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের মধ্যে চান্দ্র হিসাবের প্রচলন থাকতে হবে। যাতে রামাজান, হজ ইত্যাদি ইবাদতের হিসাব জানা থাকে। এমন যাতে না হয়, শুধু জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী ছাড়া অন্য কোনো মাসই তার জানা নেই। ইসলামী ফিকাহবিদগণ চান্দ্রবর্ষের হিসাব রাখাকে মুসলমানদের জন্য ফরজে কিফায়া বলেছেন। এতে সন্দেহের অবকাশ নেই, চান্দ্রমাসের হিসাবের অনুসরণ নবীজি সা. ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত। যাদের অনুসরণ আমাদের জন্য পুণ্যময় ও কল্যাণকর আমল।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন- আমরা বাঙ্গালী যেমন সত্য, তার থেকে আরো সত্য আমরা মুসলমান।’ কাজেই একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত ইংরেজীর মত নয়, বরং তার চেয়েও অধিক হারে হিজরী সনের অনুসরণ করা আদর্শের দাবী!
লেখক : লুকমান হাকিম- শিক্ষক, অনুবাদক ও সংগঠক।
lukmanbinashab@gmail.com