কবি ফকির ইলিয়াসের ৫৯তম জন্মদিন আজ
বিশেষ প্রতিনিধি
“এই সূর্যরেখা ভেদ করেই এসেছিল
আমাদের বিজয়, একটি পাখির ডানা উড়েছিল পতাকা হয়ে”
বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্ত চেতনা, অসাম্প্র্রদায়িকতা ও নাগরিকতার অগ্রদূত কবি ফকির ইলিয়াস বাংলা সাহিত্যে আলাদা স্থান করে নিয়েছেন তার নিজস্বতা দিয়ে। প্রতিবাদ ও প্রেমে, সশব্দতা ও মগ্নতায় বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান এ কবি অনন্য। স্বদেশ, নগর আর মানুষের সঙ্গে গভীর প্রেম ও আত্মিক বন্ধনে বাঁধা এমন অনেক কাব্যের পংক্তিকর্তা কবি ফকির ইলিয়াস।
আজ (২৮ ডিসেম্বর) এই সময়ের অন্যতম শক্তিমান কবি ফকির ইলিয়াসের ৫৯তম জন্মদিন। ১৯৬২ সালের এই দিনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১০নং কামাল ইউনিয়নের পুরানগাঁও (মোল্লা বাড়ী) গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
ফকির ইলিয়াস মূলত কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, গ্রন্থসমালোচক, সাংবাদিক হিসেবেও রয়েছে তাঁর পরিচিতি।
প্রবাসে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি- লালন চর্চায় তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এযাবৎ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা বাইশটি। সমসাময়িক রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র ও স্বাধীনতার উত্তরাধিকার’ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস ‘মেঘাহত চন্দ্রের প্রকার’ গ্রন্থ দু’টিতে তিনি দক্ষতার সাথে বর্ণনা করেছেন। বাঙালী জাতীর মুক্তি সংগ্রামের চাওয়া-পাওয়া, বাংলার চিরায়ত মরমী ধারার সহস্রাধিক গানের পদকর্তা এই কবি।
তাঁর লেখা নিয়মিত ছাপা হচ্ছে ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন, নিউইয়র্ক, কানাডা, সুইডেন, ইতালী, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান’সহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, ম্যাগাজিন, সাহিত্যপত্রে, ওয়েব, ব্লগ, ই-নিউজ গ্রুপেও তিনি লিখছেন নিয়মিত।
সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি- ফোবানা সাহিত্য পুরষ্কার, ঠিকানা শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পুরষ্কার, কবিতাস্বজন প্রীতি সম্মাননা, মৃত্তিকায় মহাকাল আবৃত্তি উৎসব স্মারক’ পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন ‘ঘুংঘুর’ এর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এছাড়াও অনেকগুলো ওয়েব পোর্টালের প্রধান সম্পাদকীয় উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা সম্পাদক, এডিটোরিয়াল বোর্ড মেম্বার, কান্ট্রি এডিটরের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
তিনি ‘দ্যা একাডেমী অব আমেরিকান পোয়েটস, দ্যা এ্যমেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিষ্টস, আমেরিকান ইমেজ প্রেস’ এর সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন বহু বছর যাবৎ।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে-
- ১। বাউলের আর্তনাদ (গান-১৯৮৫)
- ২। হৃদে গাঁথা মালা (গান-১৯৮৯)
- ৩। এ নীল নির্বাসনে (কবিতা-১৯৯১)
- ৪। অবরুদ্ধ বসন্তের কোরাস (কবিতা-১৯৯৬)
- ৫। দাক্ষিণ্য বিষয়ক দিন (কবিতা-১৯৯৮)
- ৬। বৃত্তের ব্যবচ্ছেদ (কবিতা-২০০১)
- ৭। অনন্ত আত্মার গান (গান- ২০০২)
- ৮। কবিতার বিভাসূত্র (প্রবন্ধ- ২০০৯)
- ৯। চৈতন্যের চাষকথা (গল্প-২০১০)
- ১০। গুহার দরিয়া থেকে ভাসে সূর্যমেঘ (কবিতা-২০১১)
- ১১। ছায়াদীর্ঘ সমুদ্রের গ্রাম (কবিতা-২০১২)
- ১২। গৃহীত গ্রাফগদ্য (কবিতা-২০১৪)
- ১৩। অনির্বাচিত কবিতা (কবিতা-২০১৫)
- ১৪। সাহিত্যের শিল্পঋণ (প্রবন্ধ-২০১৬)
- ১৫। মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র ও স্বাধীনতার উত্তরাধিকার (প্রবন্ধ-২০১৭)
- ১৬। মেঘাহত চন্দ্রের প্রকার (উপন্যাস-২০১৭)
- ১৭। শহীদ কাদরী’র দরবারের দ্যুতি (প্রবন্ধ-২০১৮)
- ১৮। প্যারিস সিরিজ ও অন্যান্য কবিতা (কবিতা-২০১৮)
- ১৯। নক্ষত্র বিক্রির রাতে (কবিতা-২০১৯)
- ২০। সম্মোহিত শব্দদাগ (প্রবন্ধ-২০১৯)
- ২১। গ্রহান্ধ ঘরের কাহিনি (কবিতা-২০১৯)
- ২২। ধানমণ্ডির ধ্বনিপুত্র (কবিতা-২০২০)। (সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থটিতে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে তাঁকে নিয়েই লেখা কবিতাগুলো স্থান পেয়েছে।)
সাংবাদিকতার সাথে তাঁর সংযুক্তি প্রায় চার দশকেরও বেশি সময়ের। তিনি বিভিন্ন সময়ে যেসব মিডিয়ায় দায়িত্ব পালন করেছেন এর মাঝে রয়েছে- উত্তর আমেরিকা প্রতিনিধি- দৈনিক আজকের কাগজ, ঢাকা। (জানুয়ারি ১৯৯২ থেকে অক্টোবর ২০০৬) যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি- দৈনিক সিলেটের ডাক, সিলেট। (জানুয়ারি ১৯৮৯ থেকে ডিসেম্বর ২০০৮) যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি- সাপ্তাহিক জনমত ইংল্যান্ড। (জানুয়ারি ১৯৯০ থেকে ডিসেম্বর ২০০৯) যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি- সাপ্তাহিক দিকচিহ্ন, ঢাকা (জানুয়ারি ১৯৯০ থেকে ডিসেম্বর ২০০২)। নিউইয়র্ক প্রতিনিধি- সাপ্তাহিক সময়, ঢাকা। (জানুয়ারি ১৯৯৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০০১)।
ব্যক্তিগতজীবনে কবি ফকির ইলিয়াস বিবাহিত। তার সহধর্মিনী কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি এবং দু’কন্যা নাহিয়ান ইলিয়াস ও নাশরাত ইলিয়াসকে নিয়ে বসবাস করছেন নিউইয়র্কে।